আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষে নিহত ৪৬

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররম জেলায় স্থানীয় শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কুররম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আট দিন আগে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী জেলা কুররামে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তারপর সেই বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। এতে আরও ৮০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের নৈসর্গিক পর্যটন স্পটগুলোর জন্য পরিচিত কুররাম জেলা। পর্যটকদের আনাগোনা থাকায়  জেলার বিভিন্ন এলাকায় হোটেল তৈরি হচ্ছে সেখানে। এতে জমি সংক্রান্ত বিরোধও বাড়ছে। সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষেরও মূল কারণ জমি বিরোধ।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঞ্চলগুলোর মধ্যেও কুররাম জেলা একটি। কেবল সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিস্তারের ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলো জমির দাবি নিয়ে এ অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

জুলাইয়ে এই দুই সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়। এরপর স্থানীয় নেতাদের শালিসের (জিরগা নামে পরিচিত) সিদ্ধান্তে সংঘাতে বিরতি দেওয়া হয়।

কুররম জেলার স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা রজব আলী আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, আট দিন আগে আবারও শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ জন এবং আহত হয়েছে ৮০ জনেরও বেশি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘নিহতের সংখ্যা যতটা রিপোর্ট করা হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি। ৮০ জনেরও বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই আহত হয়েছেন। আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে, এই লড়াই কতদিন চলবে। কারণ উভয় পক্ষেরই একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। শুধু জমির দাবিতে নয়, একটি দল সুন্নি এবং অন্যটি শিয়া সম্প্রদায়ের বলে জাতিগত বিদ্বেষও।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুররাম জেলার এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘জেলার ১০টি এলাকায় ভারী অস্ত্রের ব্যবহারে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়রা এই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ নিরসনে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, পারাচিনার-পেশোয়ার প্রধান সড়ক এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তান খারলাচি সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়ক অবরোধের কারণে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার বাজার, স্কুল-কলেজও গত আট দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। 

কুররমের স্থানীয় উপজাতি নেতা মির আফজাল খান তুরি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দাঙ্গা থামানোর মতো অবস্থা আর এখন আর শিয়া কিংবা সুন্নি- কোনো সম্প্রদায়ের নেতাদের হাতে নেই। দু’পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আমরা এই দাঙ্গা পরিস্থিতি থামানোর জন্য সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চাইছি।’