আন্তর্জাতিক

আঙুল নাড়িয়ে শত্রুকে হুমকি দিতেন তিনি

শত্রুরাও স্বীকার করতেন হিজবুল্লাহার প্রধান হাসান নারসরাল্লাহ এক জন সুবক্তা। তার বক্তৃতা বন্ধু ও শত্রু উভয়েই মনোযোগ দিয়ে শুনতো। কালো পাগড়ি পরা নাসরাল্লাহ যখন হুমকি দিতেন, তখন তার আঙুল নড়তো দ্রুততার সাথে।

১৯৯২ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরাল্লাহ। এর আগে ইসরায়েলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া ছিল হাসান নাসরাল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি। ২০০৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন হিজবুল্লাহর গেরিলা বাহিনী দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে বিতাড়িত করে, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের ১৮ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। এর বিনিময়ে বহু আরবের সম্মান ও শ্রদ্ধা জিতে নিয়েছিলেন নাসরাল্লাহ। কারণ তারা জন্মের পর থেকেই ইসরায়েলের বিজয় দেখে আসছিল।

২০০৬ সালের যুদ্ধের পরের বছরগুলোতে নাসরাল্লাহ ইসরায়েলের সাথে একটি নতুন সংঘাতের জন্য সতর্কভাবে পা ফেলেছিলেন। হুমকি এবং পাল্টা হুমকির মধ্যেই তিনি হিজবুল্লাহর অস্ত্র ভাণ্ডারের জন্য ইরানী রকেট মজুদ করেছিলেন।

৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর হামাসকে সহযোগিতা দিতে শুরু করে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে থাকে গোষ্ঠীটি। ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ শত শত যোদ্ধা নিহত হয়।

পহেলা আগস্ট হিজবুল্লাহর সমাবেশে নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, ‘আমরা এখান গাজা ও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থনের জন্য এবং ফিলিস্তিনকে আমাদের নিজেদের বলে গ্রহণ করার জন্য মূল্য পরিশোধ করছি।’

নাসরাল্লাহ বৈরুতের দরিদ্র কারান্তিনা জেলায় বড় হয়েছেন। তার পরিবার লেবাননের প্রধানত শিয়া অধ্যুষিত দক্ষিণের একটি গ্রাম বাজোরিয়াহ থেকে এসেছে। নাসরাল্লাহ তরুণ লেবানিজ শিয়াদের একটি প্রজন্মের অংশ ছিলেন যাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দেওয়ার আগে, তিনি ইসরায়েলের দখলদার সেনাবাহিনীর সাথে লড়াইরত ফ্রন্টলাইন গেরিলাদের সাথে রাত কাটাতেন। নাসরাল্লার কিশোর পুত্র হাদি ১৯৯৭ সালে যুদ্ধে নিহত হয়। 

গাজা যুদ্ধের পর আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে নাসরাল্লাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন ভূমধ্যসাগরে ‘আমরা সেই নৌবহরের জন্য প্রস্তুত নিচ্ছি যেগুলো নিয়ে আপনারা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন।’

২০২০ সালে নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, ইরাক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের কফিনে করে বের হতে হবে।

২০১৯ সালে ইয়েমেনে হামলার পর সৌদি আরবকে হুমকি দিয়ে নাসরাল্লাহ রিয়াদকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ইরানে সঙ্গে যুদ্ধের বাজি ধরবেন না, কারণ তারা আপনাদের ধ্বংস করে ছাড়বে।’