আন্তর্জাতিক

বাবা সিদ্দিককে হত্যার দায় স্বীকার করলো বিষ্ণোই গ্যাং

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা বাবা সিদ্দিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। ৬৬ বছর বয়সী এনসিপি নেতাকে গতকাল রোববার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা ইস্ট এলাকায় তার ছেলে জিশান সিদ্দিকের অফিসের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়।

আজ রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে তিন বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন। তিনজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর একজন উত্তরপ্রদেশের গুরমাইল বালজিৎ সিং (২৩), অন্যদিক হরিয়ানার ধর্মরাজ কাশ্যপ (১৯)। তৃতীয় জনকে শিব কুমার গৌতম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনিও উত্তর প্রদেশের। পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা করছে। চতুর্থ আরেকজন, যাকে নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হচ্ছে, তাকেও খুঁজছে পুলিশ।

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে সিদ্দিককে খুন করার প্র্যাকটিস করছিল‌েন ওই তিন জন। বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন তারা। আগেই তাদের ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই কাজের জন্য। বাকি অর্থ পরে দেওয়ার চুক্তি ছিল। তিনজনই ভাড়াটে খুনি বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকার নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে ছেলে জিশান সিদ্দিকের অফিস থেকে বের হন বাবা সিদ্দিক। গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, আজ রোববার সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বাবা সিদ্দিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বিষ্ণোই গ্যাং। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের এক সদস্যের ওই পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পরপরই বলিউড অভিনেতা সালমান খানের নিরাপত্তা জোরদান করা হয়েছে।

পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘সালমান খান, আমরা এই লড়াই চাইনি। কিন্তু আপনার জন্য আমাদের ভাই প্রাণ হারিয়েছে। বাবা সিদ্দিক এক সময় দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে কাজ করেছেন। এখন ভদ্র সেজেছিলেন। দাউদ এবং অনুজ থাপানের সঙ্গে সিদ্দিকের সম্পর্কই তার মৃত্যুর কারণ। কারও সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু সালমান খান বা দাউদের গ্যাংকে যারা সাহায্য করেন, তারা সাবধান! আমাদের কোনো ভাইয়ের গায়ে কেউ হাত দিলে, আমরা শাস্তি দেব। আমরা প্রথমে মারি না। প্রতিশোধ নিই।’

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গ্যাংস্টার বিষ্ণোই কারাগারে থাকলেও তার দলের সদস্যরা মহারাষ্ট্রে সক্রিয় রয়েছেন। কিছুদিন আগে সালমান খানের বাড়ির সামনে দুই যুবক মোটরসাইকেল থেকে গুলি ছুড়েছিল। সেই ঘটনাতে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। সালমানের বাবা সেলিম খানকেও হুমকি দেওয়া হয় কিছুদিন আগে। সালমান খানের সঙ্গে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিবাদ অনেক দিনের। বাবা সিদ্দিক খুনের সঙ্গে সেই বিবাদের সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বলিউড অভিনেতা সালমান খানের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকের সুসম্পর্ক ছিল। একটা সময় অভিনয়ের দুনিয়ার মানুষ ছিলেন বাবা সিদ্দিক। তবে রাজনীতিক হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। সালমান থেকে শাহরুখ, ক্যাটরিনা থেকে প্রীতি জিনতা- বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থাকতেন বলিউডের প্রথম সারির তারকারা। 

বাবা সিদ্দিক মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের অধীনে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য ও বেসামরিক সেবা সরবরাহ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ভারতের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে তিনি প্রায় পাঁচ দশক যুক্ত ছিলেন। যুব কংগ্রেসের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে ভারতের প্রায় সব দলের রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি বলিউড তারকারাও শোক প্রকাশ করেছেন।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তার সাবেক সমকর্মী সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘বাবা সিদ্দিক জির মর্মান্তিক মৃত্যুর এই ঘটনা দুঃখজনক। আমার চিন্তাভাবনা এই কঠিন সময়ে তার পরিবারের সাথে রয়েছে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ পতনকে প্রকাশ করে। সরকারকে অবশ্যই দায় নিতে হবে এবং ন্যায়বিচারের জয় করতে হবে।’

এই হত্যাকাণ্ডটি বিজেপি ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক কাঁদা ছোড়াছুড়ির সূত্রপাত করেছে। যদিও বিজেপি এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি না আহ্বান জানিয়েছে, তবে বিরোধী দল বিশেষ করে কংগ্রেস দাবি করছে, এ ঘটনা মহারাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ পতনের কারণেই।