আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের হামলাকে ‘ব্যর্থ’ বলছে ইরান, তবে...

ইসরায়েলের চালানো হামলায় ‘সামান্য ক্ষতি’ হয়েছে; তবে সামগ্রিকভাবে তা প্রতিহত করে দেওয়ার দাবি করে খবর প্রকাশ করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে শনিবার পার্স টুড লিখেছে, রাজধানী তেহরান, খুজিস্তান ও ইলাম প্রদেশের বিভিন্ন স্থাপনায় ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, তা ব্যর্থ হয়েছে। 

‘ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাদের হামলা ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ক্ষতি হয়েছে, লিখেছে সংবাদমাধ্যমটি। 

শনিবার (২৬ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। রাজধানী তেহরানে শোনা যায় বেশকিছু বিকট বিস্ফোরণের শব্দ। 

‘সুনির্দিষ্ট‘ সামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামোতে হামলা চালানো হয়েছে বলে তেলআবিব দাবি করেছে। অবশ্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ-হামলার হুমকি দিয়েছে তেহরান।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা লিখেছে, তেহরানে কয়েকটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে, হতাহত ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।

বিবিসি লিখেছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকে মাসব্যাপী ইরান-সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের জবাবে এই হামলা চালানো হচ্ছে।

ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরাত দিয়ে পার্স টুডে বলছে, তেহরান ও আশপাশের অধিবাসীরা বিস্ফোরণের যেসব শব্দ শুনতে পেয়েছে, সেগুলো ছিল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্রিয় হয়ে ওঠার শব্দ। হামলার শিকার তেহরানের লক্ষ্যবস্তুগুলোতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

তেহরান থেকে আলজাজিরার রেসাল সেদার আতাস বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি, ইরানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বের বেশ কিছু এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, তবে হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল তেহরান।

‘ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও ড্রোন স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রধানত হামলা চালানো হয়েছে।’

ইরানের গণমাধ্যম হামলায় সামান্য ক্ষতি হওয়ার দাবি করলেও আলজাজিরা লিখেছে, সব রুটে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে দেশটিতে।

সিরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় কিছু সামরিক স্থাপনাতেও হামলা করেছে ইসরায়েল।

বিবিসি লিখেছে, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমগুলো ‘পরিস্থিতি শান্ত আছে’- এমনটি পরিবেশ দেখানোর চেষ্টা করছে। তবে, দেশটির সামাজিক মাধ্যমে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির এর সিনিয়র ফেলো বেহনাম বেন তালেবলু।

তিনি বলছেন, ইরানের কিছু টার্গেটে ইসরায়েল হামলা করলেও দেশটির দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকিকে ‘সমূলে নিশ্চিহ্ন’ করার চেষ্টা করা হয়নি বলে তার মনে হয়েছে।

বিবিসি পার্সিয়ানের বাহমান কালবাসি বলছেন, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা অস্বীকার করা হয়েছে। তারা ইসরায়েলের হামলা সফল হয়নি বলে দাবি করেছে।

তার মতে, ইরান সবসময়ই হামলার পর এমন দাবি করে থাকে।

‘তবে পাল্টাপাল্টি হামলা বন্ধে এটি মুখরক্ষার একটি উপায়ও হতে পারে’, বলেন তিনি। 

বিবিসি লিখেছে, ইরাকের পরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলে চলমান সামরিক অভিযানের মধ্যেই ইরাকের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইরাকি বার্তা সংস্থাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ‘আঞ্চলিক উত্তেজনা’র কারণে দেশটির সব বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে দুজন সামরিক কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন।

আলজাজিরা বলছে, হামলার পর হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই হামলাকে ‘হামলার জবাবে হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করে পাল্টা হামলা না জড়াতে তেহরান হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে তার জবাবে ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত হামলা চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, কয়েক দফায় এ হামলা চালানো হয়েছে এবং হামলা শেষে তার ভাষায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো তাদের ঘাঁটিতে ফিরে গেছে।

এদিকে, ইরানের রাজধানী তেহরানসহ সারাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তেহরানের অধিবাসীরা সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে যার যার কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সকল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নির্ধারিত সময়ে শুরু হচ্ছে। শুধুমাত্র ইরানের সকল বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট সাময়িক সময়ের জন্য বাতিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ চ্যানেল সিবিসি দেশটির নিরাপত্তা সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে লিখেছে, ইরানের সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। কোনো পারমাণবিক বা তেল স্থাপনায় হামলা হয়নি। এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে অন্তত ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বলে দাবি করেছিল তেহরান। 

ইসরাইলের হাতে ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন, তাদের হামলায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ, আইআরজিসি কমান্ডার আব্বাস নিলফোরুশনের নিহত হওয়ার ঘটনা এবং লেবানন ও ফিলিস্তিনের নিরপরাধ নারী, পুরুষ ও শিশুদের রক্তপাতের জবাব দিতে ওই হামলা করার দাবি করেছিল আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দেশ।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দেশ ইসরায়েল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রুখে দেওয়ার দাবি করলেও তাদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেওয়ার ঘোষণা আসে এবং তাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও পায়। সেই হামলার ২৫ দিনের মাথায় ইরানকে জবাব দিল ইসরায়েল।