ইরানে শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানের তিনটি প্রদেশের কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় তিন দফায় এই হামলা চালানো হয়। গত ১ অক্টোবর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, শনিবার ভোর থেকে ইরানের একাধিক সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর কয়েক ঘণ্টা পর হামলা চালানো শেষ বলে জানায় ইসরায়েল।
ইরানে ইসরায়েলের এই হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত বিশ্বরাজনীতি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জানিয়েছে প্রতিক্রিয়া। কেউ এই হামলাকে সমর্থন দিয়ে বলছে, ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য হামলা চালিয়েছে। আবার কেউ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
পেন্টাগন যা বললো ইরানে হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। তবে ওই কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। ওই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘সম্পৃক্ততা না থাকলেও হামলার আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’
ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিমান। ফাইল ছবি/রয়টার্স
কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘তিনি আশা করেন, এটাই শেষ হামলা। মনে হয় সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছাড়া ইসরায়েল আর কোথাও হামলা চালায়নি।’
ইসরায়েলের হামলার পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র শন সাভেট বলেন, আত্মরক্ষার অধিকার চর্চার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়েছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল মূলত সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। অথচ ইরান ইসরায়েলের সবচেয়ে জনবহুল শহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল।
হামলা বন্ধের আহ্বান সাভেটের ইসরায়েলের ওপর হামলা বন্ধ করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাভেট বলেন, উত্তেজনা আর না বাড়লে পাল্টাপাল্টি হামলার এ চক্র থামতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট্রিক রাইডার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
রাশিয়ার উদ্বেগ হামলায় ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, আমরা জড়িত সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ইরানকে প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডে উস্কানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
‘ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে ‘সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখা এবং উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এসব হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ নষ্ট করবে।
এছাড়া, ইসরায়েলি হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা অঞ্চলটিকে ব্যাপক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেবে।
ইরানকে সতর্ক করল জার্মানি জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, হামলায় ইসরায়েল বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে চেষ্টা করেছে। দেশটি ইরানের আগের হামলার জবাব দিয়েছে, তার মানে এই উত্তেজনা আর না বাড়ানোর সুযোগ আছে। একই সঙ্গে তিনি ইরানকে উত্তেজনা না বাড়াতে সতর্ক করে দেন।
সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় ইরানের পাল্টা জবাব দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি সব পক্ষকে সংযত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অধিকার ইসরায়েলের আছে। একই রকমভাবে আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের নতুন করে আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়ানো প্রয়োজন। সংযম দেখানোর জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ইরানের পাল্টা জবাব দেওয়া উচিত হবে না।’
ভৌগলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে ইরানের। ছবি: বিবিসি
ইসরায়েলের সমালোচনা ইরাকের ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইরাক। এতে ইসরায়েলের সমালোচনা করে বলা হয়, দেশটি আঞ্চলিকভাবে আগ্রাসী নীতি চালিয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাতের বিস্তার ঘটাচ্ছে। গাজা উপত্যকা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে ইরাক।
আফগানিস্তান-মালয়েশিয়া-আরব আমিরাতের প্রতিক্রিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। অব্যাহত এ উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে দেশটি। এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংযম চর্চার ওপর জোর দিয়েছে।
এছাড়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ হামলাকে এ অঞ্চলে চলমান সহিংসতাকে আরও ‘তীব্র’ করে তোলার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে।
ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবদুলরাহিম মৌসাভি। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া
ইসরায়েল ‘উপযুক্ত সময়ে’ জবাব পাবে ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবদুলরাহিম মৌসাভি বলেছেন, ইসরায়েল ‘উপযুক্ত সময়ে’ এ হামলার জবাব পাবে। হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, দেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে ইরান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাগচি বলেন, আমরা এর আগেও আমাদের সংকল্প রক্ষার প্রমাণ দিয়েছি।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স