বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মূল লড়াইটা হবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে।
বিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৫টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা) থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। রাজ্য ভেদে ভোট গ্রহণের সময়সীমা হেরফের হবে। যেমন ওয়াশিংটন ও আলাস্কা রাজ্যে ভোট গ্রহণ শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হবে। দেশটিতে মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ৫৩৮টি। ওয়াশিংটন ডিসির ৩ জনসহ ৪৩৮ জন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ (নিম্নকক্ষ) এবং ১০০ জন সিনেটর (উচ্চকক্ষ) মিলে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট গণনা করা হয়।
মেইন ও নেব্রাস্কা রাজ্য ছাড়া ৪৮টি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে যিনি যে রাজ্যে সর্বোচ্চ পপুলার ভোট পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন।
নেব্রাস্কা ও মেইন রাজ্যের পপুলার ভোটের বিজয়ীরা পান দুটি করে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন সারা দেশে ৩০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে ট্রাম্পের কাছে হেরে যান।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৪৩টিতে ট্রাম্প নাকি হ্যারিস- কে জিতবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত। সমস্যা দোদুল্যমান সাত রাজ্য- পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান ও জর্জিয়াকে নিয়ে। এই সাত রাজ্যের ফল ট্রাম্প-হ্যারিসের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে।
গতকাল নিউইয়র্ক টাইমস–এর জনমত জরিপে দেখা গেছে, দেশজুড়ে ৪৯ শতাংশ মানুষ কমলা ও ৪৮ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প ১ শতাংশ, অ্যারিজোনায় ৪ শতাংশ, নেভাদায় ১ শতাংশ, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। কমলা উইসকনসিনে ১ শতাংশ ও মিশিগানে ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
এদিকে এবারের নির্বাচনে ডাকযোগেও রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়েছে। ডাকযোগের এসব ভোট কখন ও কীভাবে গণনা করা হবে তার জন্য একেক রাজ্যে রয়েছে একেক ধরনের আইন। সে কারণে এসব রাজ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে ফলাফল পাওয়া যাবে এবং কখনও কখনও সময়ের এই ব্যবধান খুব বেশিও হতে পারে।
কিছু কিছু রাজ্যে যেমন অ্যারিজোনা, নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়াতে ডাকযোগে ভোটের গণনা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ায় ৫ নভেম্বরের আগে সেগুলো স্পর্শ করা হবে না। ফলে সেখান থেকে ভোটের ফলাফল দেরিতে আসবে।
নর্থ ক্যারোলাইনায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। ফলে সেখানে কেন্দ্রে পড়া ভোট গণনা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে অল্প ভোটে জিতেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ফল কোন দিকে যায় সেটা বলা কঠিন।
ফ্লোরিডাতে ভোটগ্রহণ শেষ হবে স্থানীয় সময় রাত আটটায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই রাজ্যে দুই দলেরই জয় পরাজয় ঘটেছে এবং এবারও সে রকম হতে পারে। পোস্টাল ভোট ও কেন্দ্রে পড়া ভোট, এই দুটোর গণনা প্রথম আসবে এই ফ্লোরিডা রাজ্য থেকে। একারণে এই রাজ্যের ফলাফল কমলা হ্যারিসের পক্ষে যেতে পারে।
অ্যারিজোনাতে ভোট কেন্দ্র বন্ধ হবে স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। সেখানে ডাকযোগে ভোটের গণনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে জয়লাভ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দোদুল্যমান এ রাজ্যে জনমত জরিপে এবারও ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।
ওহাইও রাজ্যে ভোট শেষ হবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। কর্মকর্তারা ওই রাতে প্রাথমিক কিছু ফল ঘোষণা করবেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে আর কোনো ফল প্রকাশ করা হবে না।
পেনসিলভানিয়া রাজ্যে ভোট কেন্দ্র বন্ধ হবে রাত ৮টায়। কে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন তার রাস্তা তৈরিতে সাহায্য করবে এই রাজ্যের ফল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন।
উইসকনসিন এবং মিশিগানে ভোটগ্রহণ চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। নিউ ইয়র্ক টাইমসের জরিপে দেখা গেছে, দোদুল্যমান রাজ্য উইসকনসিনে কমলা হ্যারিস কিছুটা এগিয়ে আছেন। কিন্তু লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই মনে হচ্ছে। প্রতিবেশী মিশিগানও আরেকটি দোদুল্যমান রাজ্য। সেখানে কী হয় সেটাও দেখার বিষয়। এই রাজ্যে জয় পাওয়া হ্যারিস এবং ট্রাম্প- দুই শিবিরের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্থানীয় সময় ৫ নভেম্বর রাত বা ৬ নভেম্বর দিনের মধ্যে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। তবে ঝামেলা হলে চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েক দিন লাগতে পারে। যেমন ২০২০ সালের নির্বাচনে চার দিন পর চূড়ান্ত ফল জানা গিয়েছিল। সে বছর কয়েকটি রাজ্যে বাইডেন ও ট্রাম্পের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছিল। আবার ২০১৬ সালে ৫ নভেম্বর রাতের মধ্যেই ফল জানা গিয়েছিল।
ভোটাররা মূলত ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচিত করবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর তাদের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। এই ভোট আবার ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে গণনা করা হবে। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়ে পাকাপাকিভাবে হোয়াইট হাউসে বসবেন তিনি।