ব্যাপারটা অনেকটা এমনই হয়েছে-—নারীদের বিপক্ষেই জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনিই ছিলেন প্রথম নারী প্রার্থী। ওই সময় হিলারিকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। ভাবা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে হয়তো প্রথমবারের মতো এক জন নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও স্রেফ নির্বাচন ব্যবস্থার কারণে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন হিলারি।
নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন মোট ভোট পেয়েছিলেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৫। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৬ ভোট। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি, আর হিলারির পক্ষে গেছে ২২৮টি। আর এতেই বাজিমাত হয়েছিল ট্রাম্পের।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ওইবার তার প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পকে নিয়ে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা একের পর এক সামনে আসতে থাকে। নির্বাচনে ট্রাম্পকে এবার ধরাশায়ী করেন বাইডেন। এর বদৌলতে কমলা হ্যারিস হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং দাক্ষণ এশিয়ান বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট।
২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রথমে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন বাইডেন। পরবর্তীতে তিনি সরে গিয়ে প্রার্থী করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। এবারের নির্বাচনে হ্যারিসকে নিয়ে উচ্ছ্বাসও ছিলো প্রচুর। নানা ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য, মামলা, দণ্ড ইত্যাদি কারণে ধারণা করা হচ্ছিল ট্রাম্প এবার ধরাশায়ী হতে যাচ্ছেন।
বুধবার সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। ট্রাম্প খোদ ধরাশায়ী করলেন কমলা হ্যারিসকে। বিষয়টি অদ্ভূত হলেও সত্যি যে, নির্বাচনে পুরুষের বিপক্ষে জয় পাননি ট্রাম্প। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি নারীর বিপক্ষেই জয় পেলেন।
রাজনীতির মাঠে নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জয় পেলেও আদালতে ট্রাম্প নারীর বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি কখনো। তার বিরুদ্ধে যৌনতা ঘিরে অভিযোগ কিংবা কেলেঙ্কারির একাধিক ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা ই জিন ক্যারলকে যৌন হয়রানি ও মানহানি করায় ট্রাম্পকে ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের সাজা দিয়েছিল আদালত। সাবেক মডেল অ্যামি ডরিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েছেন সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে তাকে অর্থ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ব্যবসায়িক নথিতে এই অর্থ লেনদেনের বিষয়টি গোপন রাখায় জালিয়াতির অভিযোগে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।
নব্বই দশকের মার্কিন মডেল স্ট্যাসি উইলিয়ামস গত অক্টোবরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, ট্রাম্প অনুমতি না নিয়েই তাকে যৌন হয়রানি করেছেন। অযাচিতভাবে তার শরীর স্পর্শ করেছিলেন। যথারীতি ট্রাম্প সেসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।