সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ফের উত্তপ্ত ভারতের মণিপুর। সেখানে সশস্ত্র চরমপন্থিরা একজন আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের পর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, নির্মমতার শিকার ৩১ বছর বয়সী ওই নারী জিরিবাম জেলার হামার উপজাতীয় গ্রাম জাইরাউনের একটি স্কুলের শিক্ষকা ছিলেন। তার স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
পুলিশের কাছে ওই নারীর স্বামী নুগুরথানসাংয়ের দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার তার স্ত্রীকে মেইতি জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ধর্ষণ করে ও পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, নিহত নারীর লাশ পরিবারের কাছে রয়েছে, ময়নাতদন্তের জন্য ওই নারীর মরদেহ আসামের শিলচরে পাঠানোর চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, ‘পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ।
চুরাচাঁদপুর জেলার আদিবাসী উপজাতি নেতাদের ফোরাম ‘আইটিএলএফ’ একটি বিবৃতি দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার মেইতেই বন্দুকধারীরা উপজাতীয় গ্রামে প্রবেশ করে এবং গ্রামবাসীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চলায়। এরপর তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
আইটিএলএফ জানিয়েছে, ঘটনার সময় অধিকাংশ গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালাতে সক্ষম হলেও ৩১ বছর বয়সী ওই নারীকে আটকে ফেলে সশস্ত্র ব্যক্তিরা। আততায়ীরা নুগুরথানসাং-এর বৃদ্ধ বাবা-মা এবং চার থেকে আট বছর বয়সী তিন সন্তানকে চলে যেতে দিলেও তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে। শুক্রবার সকালে ওই নারীর পোড়া মরদেহ বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি, কীভাবে ওই নারী পুড়েছেন এবং কতগুলো বাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অন্তত ২০ বাড়ি পুড়ে গেছে খবর পেয়েছে পুুলিশ।
জিরিবাম এবং ফেরজাল জেলায় কর্মরত কুকি-জো নাগরিক সমাজ সংস্থা আদিবাসী উপজাতি অ্যাডভোকেসি কমিটি (আইটিএসি) একটি বিবৃতিতে এই হামলা এবং নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নিন্দা করেছে। এ ছাড়া তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
আইটিএসি আরো বলেছে, তাদের রাজ্য বাহিনী এবং পুলিশসহ মণিপুর রাজ্য সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই।
তাই জিরিবাম জেলা এবং মণিপুরের ফেরজাওল জেলার নিরীহ কুকি-জোমি-হামারদের রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, জিরিবাম জেলার পুলিশ সুপারের উদ্যোগে স্থানীয় মেইতেই ও হামার জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করার ঠিক আগে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটল। এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলস এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মণিপুরে গত বছর থেকে মেইতেই ও অন্যান্য জনজাতির মধ্যকার সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৮ জনে। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৬০ হাজারে বেশি মানুষ।