ভারত সরকার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তারা নার্ভাস নয়।
সোমবার (১১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে গতকাল রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, ‘অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের (ট্রাম্পের নেতৃত্বে) সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে নার্ভাস, কিন্তু ভারত সেসব দেশের একটি নয়।’
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে একটি তিক্ত শুল্ক যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিল, যা উভয় দেশের ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছিল।
ভারত বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই পক্ষেরই সমর্থন পেয়ে আসছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক উভয় প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ভারত ভালোভাবেই কাজ করে এসেছে। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে চীনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের সময় জয়শঙ্কর বলেন, ‘ট্রাম্পের অধীনে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি হবে না- এমন কোনো উদ্বেগ দিল্লির নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ফোনকলে অভিনন্দন জানানো ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম তিনজনের একজন ছিলেন নরেন্দ্র মোদি।’
তবে শুল্ক যুদ্ধ এই সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত মাসে মোদিকে একজন ‘দারুণ নেতা’ ও ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। কিন্তু তিনি ভারতের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক নেওয়ার অভিযোগও করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই নেতার সম্পর্কের উষ্ণতা বাণিজ্যিক বিরোধগুলো দূর করতে পারে কিনা তা দেখা আকর্ষণীয় বিষয় হবে।
এর আগেও ট্রাম্প এবং মোদি প্রায়ই একে অপরের প্রশংসা করেছেন।
২০১৯ সালে টেক্সাসে ভারতীয়-আমেরিকান কমিউনিটির ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ও মোদি দুজনই দুজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উপস্থিতির ওই অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিদেশি নেতার সবচেয়ে বড় সংবর্ধনা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল।
পরের বছর ট্রম্পের প্রথম ভারত সফরের সময় মোদি তাকে নিজের নির্বাচনী এলাকা গুজরাটে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সেখানে সেসময় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল।
কিন্তু এত বড় ঘটনা সত্ত্বেও, তাদের সম্পর্ক হোচট খেয়েছে।
দুই দেশের তিক্ত শুল্ক যুদ্ধের কারণে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ভারতের জন্য বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করে দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের শাসনামলে এইচ-১বি ভিসার প্রত্যাখ্যানের হার ২০১৬ সালে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ২১ শতাংশে পৌঁছায়। আর এই ভিসার একটি বড় অংশ ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের দেওয়া হয়।
এদিকে, জয়শঙ্কর দাবি করেছেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হচ্ছে। তবে তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুরোনো শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলো এখনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বাজার বড়, তারা উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি খাতের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র।’