নতুন প্রশাসন সাজানোর ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ অগ্রগতির খবর দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প; যেখানে জাতিসংঘে দ্যুতিয়ালি ও সীমান্তে অভিবাসী প্রবেশ বন্ধ করতে দুজন ‘কঠোরচেতা’ নীতির মানুষকে বেছে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিবিসি লিখেছে, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে আইনপ্রণেতা হওয়ার গৌবর অর্জন করা নিউ ইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিককে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প।
আর সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও সীমান্ত রক্ষার যাবতীয় আয়োজনে ট্রাম্প দায়িত্ব দিচ্ছেন টম হোম্যানকে, যিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অভিবাসন ও শুল্ক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ট্রাম্প তার নিজের ট্রুথ স্যোশালে দুজনকে বেছে নেওয়ার কারণ বর্ণনা করে পোস্ট দিয়েছেন। তার ভাষায় এলিস স্টেফানিক ও টম হোম্যান উভয়ই ‘নতুন’ যুক্তরাষ্ট্রের লড়াকু নীতিপ্রণেতা এবং ‘কঠোর সিদ্ধান্ত’ নিতে তারা পিছপা হন না
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির সহযোগী সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজ দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়া স্টেফানিক ও হোম্যানের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি)।
ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি দেশটির কংগ্রেসের উভয় কক্ষে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে রয়েছে। এরই মধ্যে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলটি প্রতিনিধি পরিষদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে রয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যে আইনপ্রণেতা পদে ফলাফল ঘোষণা চলছে। এরই মধ্যে ২১৫টি আসনে জয় পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য দরকার আর মাত্র তিনটি অর্থাৎ ২১৮টি আসন। তাদের বিপরীতে ডেমোক্রেটিক পার্টি জিতেছে ২১০টি আসন।
উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রয়োগের পথ সহজ হবে; আইন পাসে প্রতিবন্ধতার মুখে কম পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণে ট্রাম্প স্বস্তির রেখা ধরে এগিয়ে যেতে পারবেন বলে বিবিসি লিখেছে।
ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমাদের জাতির সীমান্ত রক্ষার প্রধান হবেন হোম্যান, শুধু তাই নয়; তার কোনো বাধাধরা সীমান্ত থাকবে না; তিনি দক্ষিণ সীমান্ত, উত্তর সীমান্ত, সমগ্র সামুদ্রিক এবং আকাশ সীমাও তার দায়িত্বে থাকবে।” অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের জন্য হোম্যানের ওপর আস্থা প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেছেন, “একইভাবে অবৈধ ভিনদেশিদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোরও যাবতীয় দায়িত্ব্ তার (হোম্যান) ওপর থাকবে। অভিননন্দন টম। তিনি তার দায়িত্বে খুবই ভালো করবেন এবং এই কাজের তিনি দীর্ঘপ্রতিক্ষায় আছেন; এতে আমার কোনো সংশয় নেই।”
নির্বাচনে প্রচারে ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়িত করা এবং নতুন করে অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, সেজন্য কঠোর সীমান্ত নীতি বাস্তবায়ন করা; যা তিনি ২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসে করতে চেয়েছিলেন।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের বেছে নেওয়া স্টেফানিক ২০১৪ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কের ২১তম ডিস্ট্রিক্ট কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন, যার ধারাবাহিকতা তিনি এখনও ধরে রেখেছেন। প্রখর মেধাবী এই নারী তার রাজনীতির শুরুতে ট্রাম্পের সমালোচক থাকলেও পরে তিনি ট্রাম্পীয় নীতির প্রচারকে পরিণত হন।
স্টেফানিককে ‘প্রতয়ী, ক্ষিপ্র ও অগ্রভাগের লড়াকু স্মার্ট আমেরিকান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প।
৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রশাসন সাজানো শুরু করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার প্রশাসনে এবার বড় চমক হিসেবে থাকছেন টেক বিলিয়নিয়র স্পেস এক্স এবং মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এর মালিক ইলন মাস্ক।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য পছন্দের ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিয়েছেন ট্রাম্প।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নেবেন ট্রাম্প। আগামী চার বছর তার নেতৃত্বে চলবে যুক্তরাষ্ট্র।