সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার দেশের রাজধানী রিয়াদে আরব ও মুসলিম নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলকে এখনই গাজা ও লেবাননে সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান রেখেছেন।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আরব লীগ এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার যৌথ (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে বক্তৃতা করেন, যখন ‘ফিলিস্তিনি ও লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার’ নিন্দা করেন তিনি।
আলজাজিরা লিখেছে, ইসরায়েলকে ‘আর যে কোনো আগ্রাসন থেকে বিরত থাকার’ আহ্বান রাখেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
বিন সালমানকে সৌদি আরবের সবচেয়ে ক্ষমতা চর্চাকারী নেতা মনে করা হয়। এমবিএস নামেই তিনি বেশি পরিচিত।
আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গিতও বিন সালমানের সঙ্গে একই সুরে গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নিন্দা করেন, বলেন, ‘শব্দ দিয়ে এখন আর ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা প্রকাশ করা যায় না।’
“ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গৃহীত পদক্ষেপগুলো দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের প্রচেষ্টাকে ক্ষীণ করছে। শুধু ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই আমরা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব,” বলেন আবুল গিত।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি শীর্ষ সম্মেলনে বলেন, তার দেশ একটি ‘অভূতপূর্ব’ সংকটে ভুগছে; যা তাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে, কারণ ইসরাইল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে।
“লেবানন একটি অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক এবং অস্তিত্বের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে,” বলেন মিকাতি।
আলজাজিরা বলেছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুও এই সম্মেলনে যোগ দেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তার রাষ্ট্রের ‘নির্বাহী বিষয়ের’ চাপের কারণে বৈঠকে যোগ দেননি। তবে বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
কায়রো-ভিত্তিক আরব লীগ এবং জেদ্দা-ভিত্তিক ওআইসি-এর রিয়াদে অনুরূপ সমাবেশের এক বছর পর এই শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে। সেই সময় নেতারা গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে ‘বর্বর’ বলে নিন্দা করেছিলেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বা দেশটিতে তেল সরবরাহ স্থগিত করার আহ্বান সত্ত্বেও নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একমত হতে পারেননি।
৫৭ সদস্যের ওআইসি এবং ২২ সদস্যের আরব লীগের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের নেতৃত্বে আঞ্চলিক একত্রীকরণের বিরোধিতা করে আসছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ নামে থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সিনিয়র উপসাগরীয় বিশ্লেষক আনা জ্যাকবস বলেছেন, গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় এবং তার হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে তার বসতে যাওয়ার বিষয়টি সম্ভবত রিয়াদে জমায়েত হওয়া নেতাদের মনে থাকবে।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, “এই শীর্ষ সম্মেলনটি আঞ্চলিক নেতাদের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনকে মার্কিন যুক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কী চায়, সেটির ইঙ্গিত দেওয়ার জন্য একটি সুযোগ।
“বার্তাটি সম্ভবত সংলাপ, উত্তেজনা হ্রাস ও এই অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বানের মতো হবে।”
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর পর গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হয়। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল লেবাননে ৩ হাজার ১০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে।