আন্তর্জাতিক

শাস্তি হিসেবে বুলডোজার দিয়ে কারো বাড়ি ভাঙা যাবে না

কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বুলডোজার দিয়ে তার বাড়ি ভেঙে ফেলা যাবে না। পুলিশ-প্রশাসন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারে না। এখন থেকে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য অবৈধ অবকাঠামো ভাঙতে গেলেও তা করতে হবে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি মেনেই। বুধবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে বুলডোজ়ার মামলার রায় শোনান বিচারপতি বিআর গভই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ।

বিচারপতি গভই বলেন, ‘আমরা বাসস্থানের অধিকারের দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। সংবিধানের ১৯ এবং ২১তম অনুচ্ছেদেও এর উল্লেখ রয়েছে। বাসস্থানের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এই ধরনের অধিকার থেকে নিরপরাধ মানুষকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।’

আদালত জানিয়েছে, যখন কোনো নির্দিষ্ট বাড়ি কিংবা কাঠামো হঠাৎ করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অথচ অন্য কাঠামোগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়-তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এই কাজটি বেআইনি নির্মাণে বাধা দিতে নয়, বরং আইনের ঊর্ধ্বে উঠে কোনো ব্যক্তিবিশেষকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। 

বিচারপতি গভই বলেন, ‘এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না। কোনো ব্যক্তি বিচার করতে পারেন না, কে দোষী আর কে দোষী নয়। কেউ এভাবে আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না।’ 

‘বুলডোজার নীতি’ নিয়ে আগেও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় গত ১ অক্টোবর অন্তর্বতী আদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে বিচারপতি গভই এবং বিচারপতি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনো বাড়ি কিংবা দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রের উদ্দেশে দুই বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, কোনও ব্যক্তি অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত হলেও তার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হবে কেন? বরং বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত। 

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, ‘বুলডোজার পদক্ষেপ’ তখনই নেওয়া হয়, যখন কোনো বাড়ি বা কাঠামো অবৈধভাবে তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। উত্তরে বিচারপতি গাভাই জানান, তারা এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি তৈরি করে দেবেন। এর পরেই শীর্ষ আদালতের পক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা অবৈধ নির্মাণকে বাঁচানোর কথা বলছে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি নিয়মবিধি থাকা উচিত। যদিও রাস্তা কিংবা ফুটপাতের মাঝে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে ওই অন্তর্বর্তী আদেশ প্রযোজ্য হবে না, এমনটাও জানায় সুপ্রিম কোর্ট।

সূত্র: আনন্দবাজার