ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ায় শনিবার (১৬ নভেম্বর) থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর এই সিদ্ধান্ত ইউরোপে তাদের সবশেষ যে গুটি কতক দেশে গ্যাস সরবরাহ রয়েছে সেখানে দ্রুত ইতি টানার ইঙ্গিত দেয়। খবর রয়টার্সের।
এই স্থগিতাদেশের ফলে রাশিয়া এখন শুধু হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় গ্যাস সরবরাহ করবে। যদিও ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট গ্যাস চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটাতো রাশিয়া।
পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি শুরু করেছিল অস্ট্রিয়া। এই জন্য ১৯৬৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে একটি গ্যাস চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল দেশটি। এই চুক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের চেকোস্লোভাকিয়ায় আক্রমণের কয়েক মাস আগেই হয়।
তবে এ বছর রাশিয়ার গ্যাজপ্রম এবং অস্ট্রিয়ার ওএমভি-এর মধ্যে একটি চুক্তিগত বিরোধের কারণে এই সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটবে। মধ্য ইউরোপীয় গ্যাস হাব প্ল্যাটফর্মে এক নোটিশে ওএমভি জানিয়েছে, গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে, শনিবার থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে গ্যাজপ্রম।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার বলেছেন, গ্যাজপ্রমের সরবরাহ বন্ধ করার নোটিশটি দীর্ঘ প্রত্যাশিত ছিল এবং অস্ট্রিয়া প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
ওএমভি জানিয়েছে, তারা বিকল্প হিসেবে জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস থেকে গ্যাস আমদানির কথা ভাবছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যম অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ায় গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। অন্যদিকে হাঙ্গেরির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ তুরস্কের মধ্য দিয়ে সরবরাহ করে।
ইউক্রেন বলেছে, তারা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে না। কিয়েভের দাবি, এই অর্থ রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে লিখেছেন, “অস্ট্রিয়ায় রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পদক্ষেপ দেখিয়েছে, দেশটি আবারও একটি অস্ত্র হিসাবে শক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু অস্ট্রিয়া জ্বালানি সুরক্ষা নিশ্চিত করার ও ‘ব্ল্যাকমেইল প্রত্যাখ্যান’ করার একটি উপায় খুঁজে বের করবে।”
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ইউরোপের যুগ শেষ হয়ে গেছে। রাশিয়ান জ্বালানি মুনাফা ও যুদ্ধ তহবিল শেষ হওয়ার সময় এসেছে।’
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইউরোপসহ বিশ্বব্যাপী গ্যাসের দাম বেড়েছে। তবে কিছু ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসসহ বিকল্প উৎস খুঁজে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস উৎপাদক হয়ে উঠেছে এবং উৎপাদন বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক এনার্জি সংস্থার তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন ট্রানজিট রুট অস্ট্রিয়া ও এর পূর্ব প্রতিবেশী হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়াতে গ্যাসের চাহিদার ৬৫ শতাংশ পূরণ করেছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, নতুন বছরে মস্কোর সঙ্গে কিয়েভের ট্রানজিট চুক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি কমিশনার কাদরি সিমসন আজারবাইজানে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউক্রেন রুটের মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণকারী সব ইইউ দেশগুলোর অন্যান্য সরবরাহের উৎসগুলোতে অ্যাকসেস রয়েছে, যা এই শূন্যতা পূরণ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, বিকল্প সরবরাহ পাওয়া যায় এবং ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস পরিবহন অব্যাহত রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।