মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চীনে দুটি বড় ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মন্থর অর্থনীতি এবং বিষয়টির সঙ্গে সম্পর্কিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো চাপ মোকাবেলা করতে চীন কতটা প্রস্তুত এই দুটি ঘটনা সেই প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
১১ নভেম্বর বিবাহবিচ্ছেদের মীমাংসার জন্য ক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি ঝুহাইতে একটি ভিড়ের মধ্যে তার গাড়ি উঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় নিহত হয় ৩৫ জন। এর কয়েক দিন পর উক্সিতে একটি ভোকেশনাল কলেজে ছুরি হামলা চালিয়ে এক সাবেক ছাত্র আটজনকে হত্যা করেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার চাংদে শহরে স্কুলের শিশু ও পথচারীদের ভিড়ের মধ্যে উঠিয়ে দিয়েছে একটি গাড়ি। চাংদের ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশ জানিয়েছে, চালককে আটক করা হয়েছে ও তদন্ত চলছে।
এই ঘটনাগুলো চীনের সমাজের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলেছে। ঝুহাই ও উক্সির ক্ষেত্রে, সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে পুলিশের প্রকাশ করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, অর্থনৈতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে এই হামলাগুলো চালিয়েছে।
অর্থনীতি মন্থর হওয়ার সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো আলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে চীনের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক অলৌকিকতার মাধ্যমে কম লোকেরই অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। এই ধরনের অর্থনৈতিক চাপ থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চায়না সেন্টারের সহযোগী জর্জ ম্যাগনাস বলেছেন, চীনে ব্যাপক হতাহতের ঘটনাগুলা বিকারের পরিবর্তে একটি প্যাটার্নের কথা বলছে।’
জুলাই মাসে ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষণায় চীনে একটি ব্যাপক ধারণা চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, অন্যায় এবং পদ্ধতিগত কারণে তারা সাফল্য বঞ্চিত।
জর্জ ম্যাগনাস বলেন, ‘আমি মনে করি এটি ঘটনার প্রবাহে স্পষ্ট সামাজিক ও শিল্পগত অস্বস্তি ব্যাখ্যা করতে এবং সমাজের অবস্থা সম্পর্কে সতর্কতা সংকেত পাঠায়।’
সামাজিক অন্যায় এবং বৈষম্যের একটি বিস্তৃত বোধ চরম ক্ষেত্রে এলোমেলো পথচারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বেইজিংভিত্তিক সাইকোথেরাপিস্ট শিয়াওজি কিন বলেন, ‘কিছু লোক যারা পিছিয়ে রয়েছে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরো প্রান্তিক তারা অনুভব করতে পারে যে তাদের সাথে ন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে না এবং কিছু লোক যাদের যথেষ্ট মানসিক নিয়ন্ত্রণ নেই, তাদের কখনো কখনো হিংসাত্মক বিস্ফোরণ হয়।’