হামাসের ভারপ্রাপ্ত গাজা প্রধান খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, ফিলিস্তিনি ছিটমহলের যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে জিম্মি-বন্দিদের বিনিময় চুক্তি হবে না। হামাস পরিচালিত আল-আকসা টিভি গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া নিউজ।
বুধবার লেবাননের বৈরুতে একটি সংবাদ সম্মেলনে খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা এই আগ্রাসন বন্ধ করতে চাই এবং যে কোনো বন্দী বিনিময় করার জন্য প্রথমে এটি বন্ধ করতে হবে।”
আল-হাইয়া উল্লেখ করেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ চলমান রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস ‘প্রস্তুত” এবং “সক্রিয়”। তিনি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য “দখলদার ইসরায়েলের প্রকৃত ইচ্ছার” মূল মিথ্যার সমালোচনা করেন।
আল-হাইয়া নিশ্চিত করেছেন, হামাস “আগ্রাসন” বন্ধ করার জন্য সমস্ত পথ অন্বেষণ করছে। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনি হিসাবে, আমরা স্পষ্ট ভাষায় আগ্রাসন বন্ধ চাই।”
তিনি বলেন, হামাস গাজা-সম্পর্কিত ইস্যুগুলো পরিচালনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনকে সমর্থন করে। অত্যবশ্যকীয় শর্তের সঙ্গে যে, এই কমিটি গাজাকে পুরোপুরি এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালনা করবে, সেখানে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় পরিচালনা করবে।”
আল-হাইয়া পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতাদের সাথে কায়রোতে ফলপ্রসূ বৈঠকের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন, যেগুলোর ঐক্যের প্রচেষ্টা অগ্রসর হয়েছে।
তিনি বলেন, “গাজা বিচ্ছিন্ন নয়; এটি ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থ রক্ষা এবং বিভাজন বা হুমকি রোধ করার জন্য গাজা এবং পশ্চিম তীরের মধ্যে অবিরত সমন্বয়ের আহ্বান জানাই।”
গাজা শাসন নিয়ে ইসরায়েলি প্রধামন্ত্রীর মন্তব্যের একদিন পরেই হামাসের পক্ষে থেকে এই জবাব এলো।
গত মঙ্গলবার গাজা সফর করেন নেতানিয়াহু। সেসময় তিনি বলেন, “গাজা উপত্যকায় হামাসের শাসন আর থাকবে না। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হামাস আর এ ভূখণ্ড শাসন করতে পারবে না। ইসরায়েল হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে।”
নেতানিয়াহু বলেন, “যেই আমাদের জিম্মিদের ক্ষতি করার দুঃসাহস দেখাবেন, তাকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে। আমরা আপনাকে খুঁজে বের করব ও শাস্তি দেব। আর যিনি আমাদের কাছে একজন জিম্মিকে নিয়ে আসবেন, তাকে ও তার পরিবারকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। বেছে নিন, পছন্দ আপনার; কিন্তু ফলাফল একই থাকবে। আমরা তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনব।”
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ১৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো এ হামলা অব্যাহত আছে।
গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৯৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৪ হাজার ৮ জন ফিলিস্তিনি। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।