আন্তর্জাতিক

১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ইসলামাবাদ অভিমুখে পিটিআই নেতা-কর্মীরা

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের ডাকা বাঁচা-মরার বিক্ষোভ আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকার এই বিক্ষোভ ঠেকাতে ইতোমধ্যে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। এনিয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ, কঠোর নিরাপত্তা ও আদালতের আদেশকে ‘বেআইনী’ বলে অভিহিত করে পিটিআই নেতা-কর্মীদের বেশ কয়েকটি কনভয় পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে রওনা দিয়েছে। 

গত ১৩ নভেম্বর, ইমরান খান দেশব্যাপী আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দিয়ে বলেছেন, “চুরি হওয়া ম্যান্ডেট, অন্যায় গ্রেপ্তার এবং ২৬তম সংশোধনীর (তার ভাষায় ‘একটি স্বৈরাচারী শাসনকে শক্তিশালী করেছে) বিরুদ্ধে ২৪ নভেম্বর হবে চূড়ান্ত প্রতিবাদ।”

২০২৩ সালের আগস্টে ইমরানের বিভিন্ন কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে, তার দল তার মুক্তির জন্য এবং ৮ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। ইমরান খানে আহ্বানে আজ ২৪ নভেম্বর তারা নামতে যাচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনে। 

রাজধানী ইসলামাবাদে ডনের একজন প্রতিনিধির মতে, শহর জুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে বাসস্টেশনসহ প্রধান সড়কগুলো কন্টেইনার দিয়ে অবরোধ করে রাখা হয়েছে।  

ডনের প্রতিনিধির তথ্যানুসারে, খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে মিছিলগুলো সকালে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ইসলামাবাদ অভিমুখে মিছিল থামাতে হাসানাবদলের জিটি ও মোটরওয়েতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত রয়েছে।

পিটিআই নেতা শওকত ইউসুফজাইয়ের বরাত দিয়ে ডনের প্রতিনিধি জানান, পিটিআইয়ের স্থানীয় এমপিএ এবং এমএনরা তাদের নিজ নিউ এলাকায় সমাবেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

‘এক্স’-এ একটি পোস্টে পিটিআই জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি কনভয় রাজধানী অভিমুখে যাচ্ছে। এর মধ্যে পিটিআইয়ের পেশোয়ার জেলা সভাপতি ইরফান সেলিম, বান্নু থেকে কেপি স্বাস্থ্যমন্ত্রী পাখতুন ইয়ার খানের কনভয় এবং কেপি মন্ত্রী ডা. আমজাদ আলীর নেতৃত্বে একটি কনভয় রয়েছে।

এক্স-এ পিটিআই আরেকটি পোস্টে নেতা-কর্মীদেরকে ইংরেজিতে লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করার আহ্বান জানিয়েছে ‘বিশ্বব্যাপী তাদের বার্তাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।’

পোস্টে বলা হয়েছে, “ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং একটি সাংবিধানিক পাকিস্তানের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আমাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ ও স্পষ্ট প্রতিধ্বনিত হোক!”

ইন্টারনেট ট্র্যাকিং সংস্থা নেটব্লকস এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, পাকিস্তানে রাত ১টা থেকে হোয়াটসঅ্যাপের সীমিত করা হয়েছে।

নেটব্লকসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দল পিটিআইয়ের পরিকল্পিত বিক্ষোভের আগে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা জোরদার করার কারণে এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক ঘোষণায় বলেছে, ওয়াইফাই এবং মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাগুলো কেবলমাত্র ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ এলাকায় স্থগিত করা হবে এবং দেশের বাকি অংশে স্বাভাবিক হিসাবে চালু থাকবে।

ডনের প্রতিবেদন বলছে, পাঞ্জাব ও লাহোরে আন্তঃনগর বাস পরিষেবা স্থবির হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির দিকে যাওয়ার রুটগুলো বন্ধ রাখায়।

গত শুক্রবার পাকিস্তান সরকার পূর্ণ শক্তির সাথে বিক্ষোভ দমন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন, জমায়েতের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি, মহাসড়ক ও বাসস্টেশন বন্ধের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। 

জিও নিউজের লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমাতে ইতোমধ্যে ইসলামাবাদ পুলিশ বিভিন্ন গেস্ট হাউস, হোস্টেলে অভিযান চালিয়েছে। এসব জায়গা থেকে পিটিআইয়ের সমর্থক-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

করাচি কোম্পানির সীমানা থেকে ৭০ জন, কোশার পুলিশ সীমানা থেকে ৬০ জন, বারাকাহু থেকে ২০ জন এবং রমনা পুলিশ স্টেশনের সীমানা থেকে ইমরানের দলের ২৪ জন সমর্থককে গ্রেপ্তার করে হাজতে নেওয়া হয়েছে। 

তারনল পুলিশ স্টেশন সীমানা থেকে ৪০ জন, লহি ভাইর পুলিশ স্টেশন সীমানা থেকে আরও ৪৫ জন পিটিআই'র কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জিও নিউজ। এছাড়া ইসলামাবাদের দিকে যাওয়া পিটিআইয়ের বিভিন্ন কনভয় আটকে দেওয়া হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট পিটিআই-এর পরিকল্পিত প্রতিবাদ ‘বেআইনি’ বলে রায় দিয়েছে। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে জনজীবনকে ব্যাহত না করে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে এ সপ্তাহের শেষের দিকে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সফরের কথা রয়েছে। 

ইমরান খানের ডাকা এই বিক্ষোভ রুখে দিতে ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। ইসলামাবাদের আইজি সতর্ক করেছেন যে, কেউ আইনশৃঙ্খলা এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

করাচি পুলিশ তাদের সকল কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুলতানে তিন শতাধিক পিটিআই কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, ইসলামাবাদে কেউ এলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। 

এদিকে পিটিআই’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তারা যেকোনো ভাবেই হোক বিক্ষোভ করবেন এবং ইমরান খানকে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে।