আন্তর্জাতিক

উত্তাল পাকিস্তান: পুলিশের সঙ্গে ইমরান খানের সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ইসলামাবাদে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারাগার থেকে দলের নেতার ডাকা বিক্ষোভে সাড়া দিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে রওনা দিয়েছে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক। 

ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থকদের এ বহরকে আটকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইসলামাবাদে আসতে থাকা এসব পিটিআই সমর্থকের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষও ঘটছে।

বিবিসির লাইভ খবরে বলা হয়েছে, ‘ডি চৌক’ এলাকায় অর্থাৎ রাজধানীর প্রবেশমুখে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। 

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করছে, যার ফলে ১৪ জন কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে পিটিআই কর্মীরা দাবি করছেন, পুলিশ জনতাকে লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়ছে এবং লাঠিচার্জ করছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, সোমবার সকালে ইসলামাবাদ জুড়ে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডি চকে পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য পাঁচ বা তার অধিক মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ বা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খাইবার পাখতুনখোয়া, পাঞ্জাব ও অন্যান্য প্রদেশ থেকে পিটিআই সমর্থকরা রাজধানীর দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। 

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তারা পিটিআইয়ের এই কর্মসূচিকে ‘সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ বিক্ষোভের দিনটি আরেকটি বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তির সফরের সাথে মিলে যায়; বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সফর। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আজ ইসলামাবাদে আসছেন।

বেলারুশের একটি অগ্রিম প্রতিনিধি দল রোববার ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি রোববার এক ঘোষণায় বলেছেন, আজ রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টাকারী সব বিক্ষোভকারীদের হেফাজতে নেওয়া হবে। ইসলামাবাদে লকডাউন ঘোষণা করেছেন তিনি। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইসলামাবাদের রেড জোন বন্ধ রাখা হয়েছে, যেখানে প্রধান প্রধান সরকারি ভবন রয়েছে। কূটনৈতিক এলাকা সুরক্ষিত করা হয়েছে।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, রাজধানী ও সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে হাজার হাজার মানুষের অসুবিধার জন্য তিনি পিটিআইকে দায়ী করেন।

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারও পিটিআই-এর বারবার হরতাল আহ্বানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি এটিকে দেশের বিরুদ্ধে একটি ‘সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।

রোববার একটি বিবৃতিতে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই সর্বদা এমন একটি সময়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে যখন বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিবর্গ পাকিস্তান সফর করছেন, তা চীনের প্রধানমন্ত্রীর সফর, এসসিও শীর্ষ সম্মেলন বা অন্য কোনও উপলক্ষই হোক না কেন।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল জাতীয় উন্নয়নে পিটিআই নাশকতা করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন। রোববার একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি ইমরান খানকে রাজপথের পরিবর্তে আদালতে লড়ার আহ্বান জানান। 

পরিকল্পনামন্ত্রী ইমরান খানকে আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার পরামর্শ দেন, যেখানে তাকে বিচার করা হচ্ছে। তিনি ইমরান খানের মুক্তির জন্য তার দলকে বারবার রাজপথে নামানোর কঠোর সমালোচনা করেন। 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “তার (ইমরান খান) মুক্তি আদালতের ছাড়পত্রের উপর নির্ভর করে। তার বিরুদ্ধে নথিভুক্ত মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। এটি ছাড়া, সরকার তাকে মুক্তি দিতে পারে না।” 

পিটিআইয়ের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পিএমএল-এন নেতারা আদালত থেকে ন্যায়বিচার পেতে সক্ষম হয়েছিল এবং তাদের মুক্তির জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে হয়নি। ইমরান খান যদি বিশ্বাস করেন যে, তিনি নির্দোষ এবং তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো মিথ্যা, তাহলে এগিয়ে যাওয়ার উপায় হলো- দেশে নাশকতা ও স্বদেশের মানহানি করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান শুরু করা নয়, বরং আদালতে তার নির্দোষতা প্রমাণ করা।”

পরিকল্পনামন্ত্রী দাবি করেন, তোশাখানা এবং আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। তার আইনি দল কেবল দেরি করার কৌশল ব্যবহার করছে।

তবে কারাবন্দি ইমরান খান দেশব্যাপী আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দিয়ে বলেছেন, “চুরি হওয়া ম্যান্ডেট, অন্যায় গ্রেপ্তার এবং ২৬তম সংশোধনীর (তার ভাষায় ‘একটি স্বৈরাচারী শাসনকে শক্তিশালী করেছে) বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবাদ জানানো হবে।”

ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি পিটিআই সমর্থকদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ইমরান খানের মুক্তির লড়াইয়ের পরিবর্তে দেশের ভবিষ্যতের লড়াই হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইমরান খানের দল এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।

২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন ইমরান। তার বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পিটিআইয়ের দাবি, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় এর আগেও দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে পিটিআই সমর্থকেরা।