পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জনগণের চুরি যাওয়া ম্যান্ডেট পুনরুদ্ধার, দেশটির সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিল এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দিয়েছেন।
তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার সমর্থক দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে রওনা হন গতকাল রোববার। তবে তারা সেদিন রাজধানীতে পৌঁছাতে না পারলেও আজ সোমবার আবারও যাত্রা শুরু করেছেন। সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর নেতাকর্মীরা।
পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে জানান, সরকারের সব বাধা ডিঙিয়ে সারাদেশ থেকে পিটিআইয়ের মিছিল ও গাড়িবহর রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, “কেবল খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ার শহর থেকেই ইসলামাবাদের দিকে আসা গাড়িবহরের দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। ডিআই খান, অ্যাবোটাবাদ, বেলুচিস্তান ও অন্যান্য এলাকা থেকেও একই পরিমাণ মানুষ আসছে।”
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি শহরে যাওয়ার সব পথ কন্টেইনার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। পুলিশের পাশাপাশি আধা সামরিক ও সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায়।
ইসলামাবাদ অভিমুখে পিটিআইয়ের সবচেয়ে বড় মিছিলটি আসছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ থেকে। প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর ও ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে লাখ লাখ সমর্থক ইসলামাবাদের পার্লামেন্টের ভবন এলাকা ‘রেড জোন’ এর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছেন।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবর বলছে, গান্দাপুর ও বুশরা বিবির নেতৃত্বধীন সবচেয়ে বড় দলটি ইতিমধ্যে পাঞ্জাব পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। গাড়িবহরটি সেখানে কিছুক্ষণের জন্য থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাপুর ও ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি সমর্থকদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, পাঞ্জাবে প্রবেশ করার পরে পিটিআই তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। হাজারা বিভাগ থেকে আসা গাড়িবহরগুলোকেও গন্ডাপুরের নেতৃত্বাধীন কনভয়ে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
ইসলামাবাদ হাইকোর্ট গত সপ্তাহে পিটিআই পরিকল্পিত প্রতিবাদ সমাবেশকে বেআইনি ঘোষণা করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে ইসলামাবাদে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কারণ, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো আজ ৩ দিনের সরকারি সফরে ইসলামাবাদ আসছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার এবং পাঞ্জাব সরকার গত সপ্তাহ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও, পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমেছেন।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাপুর তাদের নেতা ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নেতা-কর্মীদেরকে এগিয়ে যাওয়ার এবং পিছপা না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাজধানী ইসলামাবাদের পথে এগিয়ে যাওয়ার সব বাধা দূর করতে নেতাকর্মীদেরকে তাদের সব শক্তি ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি সমর্থকদেরকে মিছিলের পরিবর্তে দ্রুত তাদের যানবাহনে করে এগিয়ে যেতে বলেছেন। তিনি জোর বলেছেন, তাদের দ্রুত এগোতে হবে এবং ইমরানকে না নিয়ে ফিরে আসা উচিত নয়।
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে, বিক্ষোভকারীদের রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে কোনও নমনীয়তা দেখানো হবে না।
রাজপথে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি এই অবস্থানের ফলে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইমরান খানের দল এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন ইমরান। তার বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পিটিআইয়ের দাবি, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় এর আগেও দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে পিটিআই সমর্থকেরা। তবে এবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে দলটি।