আন্তর্জাতিক

পিটিআই বিক্ষোভকারীদের ইসলামাবাদে প্রবেশ, ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশ নিহত

কারাবন্দি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিলগুলো রাজধানী ইসলামাবাদে প্রবেশ করেছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষে এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন এবং ৭০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। 

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার খাইবার পাখতুনখাওয়া (কে-পি) প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর এবং বিরোধীদলীয় নেতা ওমর আইয়ুবের নেতৃত্বে পিটিআই বিক্ষোভ মিছিলগুলো হাজারা ইন্টারচেঞ্জ থেকে ইসলামাবাদে যাত্রা শুরু করে। 

কারাবন্দি ইমরান খানকে মুক্ত করতে তার স্ত্রী বুশরা বিবির ডাকে সাড়া দিয়ে এই বিক্ষোভ মিছিলগুলো ডি-চক অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল।

যাত্রাপথে গাজি ব্রোথা ব্রিজে পুলিশি বাধার মুখে মিছিলগুলোকে তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়। ওমর আইয়ুবের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ মিছিল পাঞ্জাব পুলিশকে পিছু হটতে বাধ্য করে এবং আলী আমিন গান্দাপুরের নেতৃত্বাধীন হাজারা ডিভিশনের বিক্ষোভ মিছিলও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায়।

হজারা মোটরওয়েতে পুলিশ ও পিটিআই কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পিটিআই কর্মীরা পুলিশের ওপর পাথর ছুঁড়েছে। সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ডিএসপি চৌধুরী জুলফিকার, শাহিদ গিলানি এবং এএসআই তাবাসসুমসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।

পিটিআই কর্মীদের হামলায় মোবাশির নামে ৪৬ বছর বয়সি এক কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল।

এদিকে, রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে গতকাল সোমবার পিটিআই নেতা ব্যারিস্টার আলি সাইফ এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলি খান দেখা করেছেন। ইমরান খানের সঙ্গে ৯০ মিনিটের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ব্যারিস্টার গহর বলেন, চার দফা দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে এবং আন্দোলন পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে।

সরকারের পদক্ষেপ

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ৩ দিনের সরকারি সফরে সোমবার ইসলামাবাদে এসেছেন। পাকিস্তান সরকার রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে ইসলামাবাদ ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে কন্টেইনার বসিয়ে প্রধান সড়কগুলো অবরুদ্ধ করেছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি রেঞ্জার্স এবং ফ্রন্টিয়ার বাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে। 

পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর নেতৃত্বাধীন সরকার বলছে, বিক্ষোভকারীদের রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে কোনও নমনীয়তা দেখানো হবে না। 

তা সত্ত্বেও পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান এবং কে-পি থেকে পিটিআই কর্মীরা ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চ করছে। রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, গুজরানওয়ালা এবং সিয়ালকোটসহ বিভিন্ন শহর থেকে কর্মীরা এতে যোগ দিয়েছে।

সোমবার পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শাহিদ নওয়াজ জানান, পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ এরই মধ্যে ইমরান খানের ৪ হাজরের বেশি নেতা-কর্মী ও সমর্থককে আটক করেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ইসলামাবাদে প্রবেশের পথে পিটিআই কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুরের নেতৃত্বে পিটিআইয়ের গাড়িবহর সোমবার রাতে ইসলামাবাদ টোল প্লাজা অতিক্রম করেছে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসলামাবাদের রেড জোন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে। 

এদিকে পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “আমরা পিছু হটব না এবং ইসলামাবাদ পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” 

রাজপথে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি এই অবস্থানের ফলে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইমরান খানের দল এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।

২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন ইমরান। তার বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পিটিআইয়ের দাবি, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় এর আগেও দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে পিটিআই সমর্থকেরা। তবে এবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে দলটি।