পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিক্ষোভ চলাকালে একটি গাড়ি দিয়ে হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর চার রেঞ্জার্স সদস্য নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে পিটিআই’র বিক্ষোভ মিছিল ইসলামাবাদে প্রবেশ করলে শ্রীনগর হাইওয়েতে এই সহিংস ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর।
রেডিও পাকিস্তান খবরে বলা হয়েছে, সোমবার পৃথক ঘটনায় পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের অন্তত দুজন সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতেদের মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল মুবাশার বিলাল। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবিধানের ২৪৫ ধারা সক্রিয় করে ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীকে পরিস্থিতি অশান্ত করার যেকোনো তৎপরতা কঠোর হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছে, তাদেরকে আন্দোলনকারী ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, যার মধ্যে দাঙ্গাকারীদের গুলি করার মতো চরম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও রয়েছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তিটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা যেকোনো এলাকায় কারফিউ জারি করার ক্ষমতা দেয়।
রাওয়ালপিন্ডিতে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর ছুঁড়ে ও গুলি ছুড়েছে। এতে একজন রেঞ্জার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তিসহ চার দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পিটিআই। রাজধানী ইসলামাবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটি। তাদের ঠেকাতে রাজধানীর সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত।
তবে সব বাধা উপেক্ষা করে গতকাল সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে পিটিআই নেতা-কর্মীদের গাড়িবহর। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজারজনকে।
রেড জোনে প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি পিটিআইয়ের নেতাকর্মীদেরকে রাজধানীর প্রবেশমুখ ডি-চকে তাদের মিছিল থামাতে বলেছেন। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডিতে ডি-চক পরিদর্শন ও নিহত পুলিশ সদস্য মুবাশার বিলালের জানাজা শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মন্ত্রী জানান, সরকার পিটিআইকে রাজধানীর স্পর্শকাতর স্থানে প্রবেশের পরিবর্তে সাংজানিতে তাদের অবস্থান কর্মসূচির বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে।
নকভি বলেন, পিটিআই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে নিজেদের এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিল কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের সুযোগ দেবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিক্ষোভকারীদের গুলির জবাবে পুলিশ গুলি চালালে তারা পাথরগড় অতিক্রম করতেও পারবে না। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংযম প্রদর্শন করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি আবার বলছি, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট ইসলামাবাদে রয়েছেন, তাই রেড লাইন অতিক্রম করবেন না। অন্যথায়, আমরা চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।”
তিনি বলেন, “পিটিআইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা সাংজানিতে যাবে কি না। তারা এখানে (ডি-চকে) পৌঁছাতে চেয়েছে এবং আমরা তাদেরকে সে সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু এটি এখন আর চলতে পারে না। আমরা যেখানে প্রয়োজন সেখানে নম্রতা দেখিয়েছি কিন্তু একবার রেড লাইন অতিক্রম করলে সরকার চরম পদক্ষেপ নেবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “বিক্ষোভকারীরা তাদের বিক্ষোভকে উৎসাহিত করার জন্য একটি লাশ পাওয়ার চেষ্টা করছিল। তবে সরকার নিশ্চিত করেছে, এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা যদি তাদের গুলির জবাবে গুলি চালাতাম, তাহলে তারা পাথরগড় পর্যন্ত পার হতে পারত না। পুলিশ যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে। বুলেটের জবাবে গুলি চালানো যেত, কিন্তু পুলিশ বিক্ষোভকারীদের রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস দিয়ে জবাব দিয়েছে যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।”
এদিকে পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “আমরা পিছু হটব না এবং ইসলামাবাদ পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
অর্থাৎ সরকার এবং পিটিআই উভয়ই তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। এর ফলে দেশটিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে এবং সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ইমরান খানের দল এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন ইমরান। তার বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পিটিআইয়ের দাবি, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলের নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় এর আগেও দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে পিটিআই সমর্থকেরা। তবে এবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে দলটি।