মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে বন্দুক এবং কর বিষয়ক মামলা ছিল। এই মামলায় তিনি দোষীও প্রমাণিত হয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ছেলেকে ক্ষমা করলেন স্বয়ং বাইডেন। এর ফলে হান্টারকে আর জেলে যেতে হবে না।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসের অফিসে ঢুকবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলেন জো বাইডেন।
হান্টারের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র রাখা এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ছিল। আদালতে তার দোষ প্রমাণিত হয়েছে। আমেরিকায় শাস্তি মকুবের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে। তিনি চাইলে কারো দোষ মকুব করে দিতে পারেন। হান্টারের ক্ষেত্রে সে কাজই করলেন বাইডেন।
হান্টারের সাজার ঘটনাকে তিনি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে আদালতের ব্যর্থতা বলেও মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় সময় রবিবার এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, “হান্টারের মামলার তথ্য যাচাই করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, শুধু আমার ছেলে হওয়ার কারণে তাকে লক্ষ্য করে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আর এটা ভুল।”
বাইডেনের এই উদ্যোগে মার্কিন বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
এর আগে বাইডেন বারবার জানিয়েছিলেন, তিনি কোনোভাবেই পরিবারের কারো জন্য প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করবেন না। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্রও সে কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন বাইডেন।
রবিবার এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বাইডেন জানান, তিনি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। ছেলেকে উদ্দেশ্যমূলক ও অন্যায় বিচারের মুখোমুখি হতে দেখেও তিনি প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেননি।
“আমি বলেছিলাম বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করব না। আমি আমার কথা রেখেছি। কিন্তু একইসঙ্গে লক্ষ্য করলাম, আমার ছেলেকে আলাদা করে উদ্দেশ্যমূলক ও অন্যায়ভাবে বিচারের মুখোমুখি করা হলো,” যোগ করেন বাইডেন।
বিরোধী দলের উসকানিতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করেন বাইডেন। নির্বাচনে বাইডেনের বিরোধিতা করতেই বিরোধী দলগুলো এমন উসকানি দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে বাইডেন আরও বলেন, “আমি বিচারব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখি। কিন্তু এ বিষয়টির সঙ্গে লড়তে যেয়ে আমার উপলব্ধি হলো, খাঁটি রাজনীতি এই প্রক্রিয়াকে আক্রান্ত করেছে এবং এতে বিচারব্যবস্থায় পচন ধরেছে।”
উল্লেখ্য, ৫৪ বছর বয়সী হান্টার ২০১৮ সালে পয়েন্ট ৩৮ রিভলবার কেনার সময় তার মাদক ব্যবহারের বিষয়ে মিথ্য তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল। এ ঘটনায় চলতি বছরে বাইডেনপুত্রকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। যে সব অপরাধে তিনি দোষী সাব্যস্ত হোন তাতে সর্বোচ্চ সাজা দাঁড়ায় ২৫ বছর। তবে হান্টারকে দোষী সাব্যস্ত করলেও বিচারকরা কোনো সাজা ঘোষণা করেননি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, খুব বেশি হলে হয়তো এক বছরের জেল হতে পারে হান্টারের। কিন্তু সাজা ঘোষণার আগেই হান্টারকে ক্ষমা করে দিলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এ প্রসঙ্গে বাইডেন তার বিবৃতিতে আরও বলেন, “মার্কিন নাগরিকরা নিশ্চয়ই বুঝবেন কেন একজন বাবা এবং একজন প্রেসিডেন্ট এমন সিদ্ধান্ত নিলেন।” কর ফাঁকি মামলায় নিজের দোষ স্বীকার করেছিলেন বাইডেনপুত্র। সেখানেও সাজা ঘোষণার আগেই হান্টারকে ক্ষমা করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সংবাদসংস্থা এএফপি-কে এ বিষয়ে ইমেইলে মন্তব্য দিয়েছেন হান্টার। সেখানে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমা তিনি জীবন দিয়ে মনে রাখবেন। তিনি তার জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলবেন এবং যারা অসুস্থ ও দুর্দশয়া আছেন, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য নিজেকে নিবেদিত রাখবেন।
এদিকে, বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা সমালোচনা করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহার বাইডেন হান্টারকে ক্ষমা করেছেন। হান্টারকে করা ক্ষমার মধ্যে কি জে-সিক্স (২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা) বন্দীরাও অন্তর্ভুক্ত, যাদের বছরের পর বছর ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে? এটি বিচারব্যস্থার অপব্যবহার ও গর্ভপাতের শামিল!”