ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার হোটেল মালিকরা বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কার্যক্রম, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও ভারতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
মালদহ হোটেল মালিকদের সংগঠন মালদা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে বলেন, “আমরা আমাদের হোটেলগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের রাখব না। বাংলাদেশে যেভাবে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে, যেভাবে আমাদের দেশকে অসম্মান করা হচ্ছে, তাতে আমরা ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মালদহ জেলায় ৯৩টি হোটেল রয়েছে। হোটেল মালিকদের সংগঠনটি আরো বলেছে, তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার ত্রিপুরা রাজ্যের হোটেল মালিকেরা বাংলাদেশিদের হোটেল ভাড়া দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। এর দুই দিন পর মালদহের হোটেল ব্যবসায়ীরাও একই ধরনের ঘোষণা দিলেন।
তার আগে কলকাতার বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এবং বেসরকারি জেএন রায় হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বাংলাদেশ থেকে মায়ের চিকিৎসা করাতে আসা এক ব্যক্তি টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
মালদহের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক হোটেল মালিকদের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে বলেন, “কোনোভাবেই একজন রোগীর চিকিৎসার অধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। এমনকি আহত যুদ্ধবন্দীদেরও চিকিৎসা করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, “সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারতীয় পতাকার অবমাননাসহ বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে তা নিন্দনীয় এবং এর প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু অসুস্থদের চিকিৎসা না করাটা আমরা ডাক্তার হিসেবে যে শপথ নিয়েছি, তার লঙ্ঘন হবে। আমরা শপথ নিয়েছি, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সব রোগীর চিকিৎসা করব।”
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালদহে প্রতি মাসে অন্তত ৮০০ বাংলাদেশি বিভিন্ন হোটেলে থাকেন। তারা চিকিৎসা, ব্যবসা বা বেড়ানোর উদ্দেশে মহাদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেন। তারা মূলত কলকাতা, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু বা দিল্লির মতো বড় শহরে যাওয়ার জন্য মালদহকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশি দর্শনার্থীরা অন্য শহরে যাওয়ার আগে মালদহে কিছু সময় অবস্থান করেন।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া আরো জানিয়েছে, ভারতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের কারণে ইমিগ্রেশন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরার জন্য ইমিগ্রেশন অফিসে ভিড় দেখা গেছে। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ হিসেবে অনেক বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ ও বিএসএফ কর্মকর্তারা তাদের পাহারা দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশে ফেরার জন্য পেট্রাপোলে অপেক্ষমাণ এক ব্যক্তি টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াকে বলেন, “আমি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফলো-আপ চিকিৎসার জন্য এসেছি। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা হতাশাজনক ছিল। আমরা বিচ্ছিন্ন ও অবাঞ্ছিত বোধ করেছি। এর আগের সফরগুলোর বিপরীতে, যখন আমরা সবসময় নিজের বাড়িতে রয়েছি বলে অনুভব করেছি।”
পেট্রাপোলের একজন বিএসএফ কর্মকর্তা সীমান্ত বন্ধের আশঙ্কাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।