আন্তর্জাতিক

অভিশংসনের মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা। প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির পদক্ষেপ ব্যর্থ করার পর এই অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করলেন এমপিরা।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিরোধী দলগুলো বলেছে, তারা আজকেই পার্লামেন্টে ইওলকে অভিশংসন করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করবেন এবং আগামী শুক্রবার বা শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ভোটের আয়োজন হবে। 

বিরোধী দলীয় জোটের সদস্য হোয়াং উন-হা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্রুত প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম স্থগিত ও তাকে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করার দিকেই এখন পার্লামেন্টের নজর থাকা উচিত।’

এদিকে, ইওলের ক্ষমতাসীন দল পিপল পাওয়ার পার্টিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিয়নকে বরখাস্ত করার ও পুরো মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে আকস্মিকভাবে সামরিক শাসন জারি করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইওল। বিস্ময়কর এই সিদ্ধান্তে তার দলের নেতা-কর্মীরাও হতবাক হয়ে পড়েন। তারা মার্শাল ল' জারির আদেশ মেনে নিতে পারেননি।

সামরিক আইন ঘোষণার দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এমপিরা এর বিরোধিতা করেন। প্রেসিডেন্টকে অস্বীকার করে জাতীয় পরিষদে জড়ো হয়ে তার সিদ্ধান্ত প্রতিহত করতে ভোট দেন। পার্লামেন্টে এই আদেশ জারির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন তারা।

দেশটির নাগরিকরাও প্রেসিডেন্ট ইওলের সামরিক শাসন জারি মেনে নিতে পারেননি। প্রেসিডেন্টের ঘোষণার বিরুদ্ধে পথে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। পার্লামেন্ট ভবনের সামনে দেখা যায় হাজারো নাগরিককে। সেখানে তাদের ‘মার্শাল ল’ এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায়।

ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বুধবার ভোরে সামরিক আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট।

সামরিক আইন প্রত্যাহার করার পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদের বাইরে বিক্ষোভকারীদের উল্লাস করতে দেখা যায়।দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য চাইলে সামরিক আইন অবশ্যই তুলে নিতে হবে।

অভিশংসনের জন্য যা প্রয়োজন

দক্ষিণ কোরিয়ার এক কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা ৩০০টি। প্রেসিডেন্ট হলেন রাষ্ট্রপ্রধান। তাকে অভিশংসিত করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোট দরকার। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ইয়োলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এখন ২০০ জন এমপির সমর্থন লাগবে। সেই সঙ্গে সাংবিধানিক আদালতেরও অনুমোদন দরকার পড়বে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির দুইশর কাছাকাছি আসন রয়েছে। এখন সরকার দলীয় কয়েকজন সদস্যের ভোট পেলেই প্রেসিডেন্ট ইয়োলকে ক্ষমতা থেকে নামানো সম্ভব হবে। 

প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হলে তার সব ক্ষমতা রোহিত হবে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট

কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের পার্লামেন্টকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বলা হয়ে থাকে। এটিই দেশটির এক কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় আইনসভা। 

দেশটিতে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন হয় চলতি বছরের ১০ এপ্রিল। । ভোটের পর সরকার গঠন করে প্রেসিডেন্ট ইয়োলের দল পিপল পাওয়ার পার্টির, যাদের যাত্রা শুরু হয় ৩০ মে।  চার বছর মেয়াদি সরকারের স্পিকার নির্বাচিত হন গত ৫ জুন। 

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ৩০০টি আসন রয়েছে, যেখানে ২৫৩টিতে সরাসরি নির্বাচন হয়। আর ৪৭টিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অনুযায়ী আসন নির্বাচন হয়।