আন্তর্জাতিক

জাপানে সাপ্তাহিক ছুটি ৩ দিন, থাকছে দ্রুত অফিস ত্যাগের সুযোগ

জাপানে জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আগামী এপ্রিল থেকে এই নীতি কার্যকর হবে, যেখানে সরকারি কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ছুটি পাবেন।

শুক্রবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহে তিন দিনের ছুটির পাশাপাশি আরেকটি নীতি চালু করছে জাপান, যার আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পিতা-মাতারা আংশিক বেতন কাটছাঁটের মাধ্যমে দ্রুত অফিস ত্যাগ করার সুযোগ পাবেন।

কর্মজীবী মায়েদের সহায়তা এবং রেকর্ড-নিম্ন জন্মহার বৃদ্ধি করতেই দেশটি নতুন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক নীতিনির্ধারণী বক্তৃতায় বলেন, “আমরা নমনীয়তার সঙ্গে কাজের ধরন পর্যালোচনা করবো। এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো, যাতে সন্তান প্রসব বা যত্ন নেওয়ার কারণে কারো যেন চাকরি ছাড়ার প্রয়োজন যেন না হয়।” 

তিনি আরো বলেন, “টোকিওর জন্য এখন সময় এসেছে জাতির জন্য এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে আমাদের জনগণের জীবন, জীবিকা এবং অর্থনীতি রক্ষা ও উন্নত করতে উদ্যোগ নেওয়ার।” 

জাপানে বহু বছর ধরে উর্বরতার হার কম, গত জুন মাসে দেশটিতে জন্মহার সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। সরকার তরুণদের বিয়ে করতে ও পরিবার শুরু করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে।

জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটিতে মাত্র ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়েছে। এর ফলে প্রজনন হার ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন ২ দশমিক ১ শতাংশ।

জাপানের সরকার জন্মহার বাড়াতে পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটির মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। স্থানীয় সরকারগুলোও পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ব্যবস্থা চালু করেছে।

তবে অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জন্মহারের নিম্নগতির জন্য দায়ী। অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা দীর্ঘদিন ধরে জাপানের কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে কর্মীরা প্রায়ই স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হন এবং চরম ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হয়—অতিরিক্ত পরিশ্রমে এ মৃত্যুকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘কারোশি’।

অন্যান্য দেশের মতো, নারীরাও প্রায়ই ক্যারিয়ার এবং পরিবারের মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য হন। জাপানের ওভারটাইম কাজের সংস্কৃতি গর্ভাবস্থা এবং বাচ্চাদের লালন-পালনকে কঠিন করে তোলে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, জাপানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও প্রবল। গত বছর দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ছিল ৫৫ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭২ শতাংশ।

পশ্চিমা দেশগুলোতে চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

তবে জাপানের জন্য এটি এখনো প্রাথমিক একটি ধারণা। দেশটির অনেক কোম্পানি কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করা সময়কে দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে দেখে।

এশিয়ার মধ্যে জাপানই একমাত্র দেশ নয়, যেখানে আরও বেশি পরিবারবান্ধব নীতি চালু হতে যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে সিঙ্গাপুর সরকার দেশটিতে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালুর বিষয়ে কর্মীদের অনুরোধ বিবেচনা করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানায়।