সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়েছে বিদ্রোহীরা। তার আগেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমানে করে দামেস্ক ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। দুজন জ্যেষ্ঠ সিরীয় কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিদ্রোহী বাহিনী দাবি করেছে যে, তারা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়েছে।
লন্ডনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ছেড়ে গেছে। সেটায় বাশার আল-আসাদ থাকতে পারেন। ওই উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে গাড়িতে এবং পায়ে হেঁটে দামেস্কের একটি প্রধান চত্বরে জড়ো হয়ে ‘স্বাধীনতা’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
বিদ্রোহীরা বলেছে, “আমরা সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্দীদের মুক্ত করার এবং তাদের শিকলমুক্ত করার এবং সেদনায়া কারাগারে অন্যায়ের যুগের সমাপ্তি ঘোষণা করার খবর উদযাপন করছি।”
সেদনায়া হলো দামেস্কের সবচেয়ে বড় সামরিক কারাগার, যেখানে সিরিয়ার সরকার হাজার হাজারকে বিদ্রোহীদের আটক রেখেছিল।
মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেছিল যে, তারা মাত্র এক দিনের লড়াইয়ের পরে হোমসের মূল শহরটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে। এরপরই আসাদের ২৪ বছরের শাসন ব্যবস্থা পতনের ঝুঁকিতে পড়ে।
অন্যদিকে রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় যুবকরা এবং সাবেক বিদ্রোহীরা ক্ষমতা হারানোর সুযোগ নিয়ে আসাদ পরিবারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছেন।
এর আগে মধ্যাঞ্চলীয় শহর হোমস থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসেন এবং স্লোগান দেন, “আসাদ চলে গেছে, হোমস মুক্ত” এবং “সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক এবং বাশার আল-আসাদের পতন হোক”।
প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
তবে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। এরই একপর্যায়ে সম্প্রতি বিদ্রোহীরা হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে পালালেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।