আন্তর্জাতিক

‘এটি স্পষ্ট ডাকাতির ঘটনা’: টিউলিপ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারকে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেওয়া সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যের দ্য সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “টিউলিপের লন্ডনের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, তিনি ‘প্লেইন (সরাসরি) ডাকাতি’র সুবিধাভোগী, তাহলে সম্পত্তিগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।” 

দ্য সানডে টাইমসের বরাত দিয়ে রোববার (১২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “জালিয়াতি ও আত্মসাতের চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত লন্ডনের বাড়িগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।” 

দ্য সানডে টাইমস বলছে, ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিকের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের এটি প্রথম মন্তব্য। এ ঘটনায় পদত্যাগের জন্য টিউলিপের ওপর চাপ আরো বাড়বে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, যুক্তরাজ্যের প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় এরই মধ্যে টিউলিপের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে।

সানডে টাইমসের তদন্তে দেখা গেছে, পানামা পেপার্সে কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা একটি অফশোর কোম্পানির কেনা লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড বাড়িতে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন টিউলিপ। সম্পত্তিটি কেনার সঙ্গে দুজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী যুক্ত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় দ্য সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের মতো একজন দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই যখন অভিযোগের মুখে থাকেন, তা আসলে ‘নির্মম রসিকতা’ হয়ে যায়। 

ইউনূস সাম্প্রতিক এক সরকারি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন যেখানে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার পাচার করেছেন। এই অর্থের একটি অংশ বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পত্তি কেনায় ব্যবহার করা হয়েছে। 

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কীভাবে টাকা চুরি হয়েছে। কিন্তু এটা চুরি নয়- কেউ চুরি করলে তা গোপন রাখে। এটি একটি ডাকাতি।”

লন্ডনে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত সম্পত্তির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান ‍উপদেষ্টা বলেন, “অবশ্যই, এটা স্পষ্ট ডাকাতির ব্যাপার। আর কিছু নয়।”

“যুক্তরাজ্যের কোনো পার্লামেন্ট সদস্য যদি এতে জড়িত থাকেন, তবে এটা অবশ্যই বড় ইস্যু। …আমরা তো (আগের সরকারের) সব লুটপাটে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই আপনারা এই ইস্যু বিশ্ববাসীর নজরে আনায় আমরা স্বস্তি বোধ করছি।”

বিগত সরকারের দুর্নীতির মাত্রা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, দুর্নীতিতে দেশকে কলুষিত করে দিয়েছে।  ‘কলুষিত’ শব্দটিও খুব কম হয়ে যায়। (দেশটি) পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। (হাসিনার শাসনামলে) বিন্দুমাত্র সততা বা স্বচ্ছতার ইচ্ছা ছিল না। সবকিছু ধ্বংস করতে তাদের কোনো দ্বিধা ছিল না।” 

টিউলিপের সম্পত্তিগুলো নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত করা উচিত কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “অবশ্যই।” তিনি আরো বলেন, “কমিশনের উচিত ‘পুরো বিষয়টি’ খতিয়ে দেখা।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আওয়ামী লীগের সহযোগীদের কেনা সম্পত্তি যদি সম্ভব হয়, তবে ফেরত আনা উচিত। এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য। কীভাবে সেগুলো ফেরত আনা যায়। কারণ এখানে জনগণের টাকার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। আর জনগণ বলতে আমি ওই বিলিয়ন ডলারের মানুষদের কথা বলছি না, সাধারণ মানুষের কথা বলছি।”

সানডে টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক ইউনূস সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান রহমানের ‘উদার’ দানশীলতা নিয়েও রসিকতা করেন, যিনি প্রিন্স চার্লসের প্রতিষ্ঠা করা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে আড়াই লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। 

ড. ইউনূস রসিকতা করে বলেন, “কী উদার মানুষ, তাই না? কত উদার…আমরা এখন সায়ানের নাম বলছি, কিন্তু আরো অনেক সায়ান আছেন যারা ককটেল পার্টিতে যাচ্ছেন। এখনও তাদের নাম প্রকাশ্যে আসেনি। কোনো পরিশ্রম ছাড়া পয়সা এলে যা খুশি করা যায়।”

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস জানান, কর্মকর্তারা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকায় বিদেশে কেনা সম্পত্তি এবং অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “তারা যেখানে থাকে, সেখানেই তাদের প্রাসাদ আছে, কেনা সম্পত্তির সম্পূর্ণ কমপ্লেক্স আছে, আপনি অনেক দেশের রাজধানীতে তাদের পাবেন, আমাদের থেকে খুব দূরে নয়, আমাদের খুব কাছের দেশগুলোতে। আমরা যুক্তরাজ্য তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। তারপরে আরো এগিয়ে যাব ক্যারিবিয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায়।”

সানডে টাইমসের মতে, ব্রিটেনের এফবিআই-এর সমতুল্য ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) বাংলাদেশকে কিছু সম্পদ উদ্ধারে সহায়তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি যুক্তরাজ্যসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অব্যাহত সহযোগিতার আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘কারণ যাই হোক না কেন, দেশগুলোকে বিষয়টি দেখা উচিত।”

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি বলছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে অসত্য বলে দাবি করেছেন।