স্বাস্থ্য ও মেগা প্রকল্প বাদে আর সব প্রকল্প এখন থেকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। কাজেই উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ে যে প্রকল্পই করা হোক, সেটাতে খুব বেশি আশার আলো দেখছেন না পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। সাক্ষাৎকারে উপমন্ত্রী নিজ মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয়ের সঙ্গে এই নিরাশার কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম মন্টু।
রফিকুল ইসলাম মন্টু: উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অবস্থা এত নাজুক হওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?
হাবিবুন নাহার: উপকূলের এসব বেড়িবাঁধ হয়েছে অনেক আগে। সেগুলো পুরাতন হয়ে গেছে, এটা যেমন সত্য, যারা চিংড়ির ঘের করেন, তারা ঘের করার সময় বেড়িবাঁধের ওপর অত্যাচার চালান। বাঁধ ফুটো করে লবণ পানি তোলেন। তারপর আবার কোনো রকমে ঢেকে দেন। ফলে জায়গাগুলো দুর্বলই থেকে যায়। তাছাড়া বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম মন্টু: চিংড়ি চাষিদের বিষয়ে করণীয় কী?
হাবিবুন নাহার: জলবাযু পরিবর্তনের ফলে আমরা লক্ষ্য করছি, পানির উচ্চতা বেড়েছে, লবণাক্ততা বেড়েছে। ওই এলাকায় চিংড়ি চাষের ফলেও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে।এটার সঙ্গে তো টাকা-পয়সাওয়ালা লোকেরা সম্পৃক্ত। এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। নিত্যনতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। ইচ্ছা করলে এ থেকে বের হয়ে আসা যায়। কিন্তু কেউ সে চেষ্টা করছে না। সবাই বলছে ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কেউ চেষ্টা করছে না। অনেকভাবে আমরা মানুষকে বুঝিয়েছি, কিন্তু এ থেকে বের করতে পারলাম না। মানুষ যদি নিজে না চায়, যার জমি সে যদি না চায়, তাহলে অন্যে তো জোর করে এটা করতে পারবে না। চিংড়িতে এক সময় মানুষ টাকা পেয়েছে। সে কারণে মানুষ ঝুঁকছে। এখন আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না। তবে পশ্চিম উপকূলের বেড়িবাঁধ নিয়ে যে সমস্যা সেটা আমাদের কাজ নয়। এটা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজ। পরিবেশগত কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করবো।
রফিকুল ইসলাম মন্টু: আপনার সাজেশন কী?
হাবিবুন নাহার: আসলে এই নাজুক বেড়িবাঁধ পুরোপুরি একসঙ্গে কখনোই করা সম্ভব না। এক দিকে করতে গেলে আরেক দিকে ভাঙবে। তাছাড়া প্রচুর টাকা লাগে। এত টাকা একসঙ্গে এক মন্ত্রণালয়কে সরকার দিতে পারে? ফলে একসঙ্গে এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ দেওয়া সম্ভব নয়। বরাদ্দ যা পাওয়া যায়, এ দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। বাঁধগুলোর বয়স অনেক হয়েছে। এগুলো রিপেয়ারিং করেই টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি নিজেই তো আমার এলাকায় বাঁধ চাই। মানুষের বিপুল পরিমাণ জমিজমা নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। সেখানে বাঁধ দরকার। কিন্তু এত বেশি টাকার প্রকল্প যে, বরাদ্দ পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমি পাবো কিনা জানি না, তবে চেষ্টা করছি আমার এলাকার জন্য। নিজের এলাকার কাজই করতে পারি না, অন্য এলাকার কাজ কীভাবে করবো?
রফিকুল ইসলাম মন্টু: আপনি বলছেন, এই কাজগুলো করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা তাহলে করছে না কেন? সমস্যাটা কোথায়?
হাবিবুন নাহার: টাকার অভাবই প্রধান। একসঙ্গে যে পরিমাণ বরাদ্দ দরকার তা পাওয়া যায় না। এবার তো প্রকল্পগুলো ক্যাটাগরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের প্রকল্পগুলো রাখা হয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলো, যেগুলো থামিয়ে রাখলে সমস্যা হবে, সেগুলো রাখা হয়েছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। নতুন যা কিছু হবে, তা ‘সি’ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। অতএব এবার বাঁধের উন্নয়নের কাজ আশা করাই ভুল। আমি আশা করছি না।
রফিকুল ইসলাম মন্টু: আপনাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ আছে?
হাবিবুন নাহার: আমাদের মন্ত্রণালয়ে তো কোনো টাকাই নাই। আমি আমার নিজের এলাকার জন্য প্রকল্প তৈরি করতে চেয়েছিলাম। তাতে দেখলাম কমপক্ষে ৬০০ কোটি টাকা লাগবে। এই টাকা আমাকে দেবে? তাহলে কীভাবে কাজ করবো?
রফিকুল ইসলাম মন্টু: আপনি কি প্রোপোজাল দিয়েছেন?
হাবিবুন নাহার: আমি তো আমার মন্ত্রণালয়ের অবস্থা জানি। যে কারণে প্রকল্প জমা দিইনি। ৬ কোটি চাইলে যদি ৪ কোটি দেয়, তা দিয়ে কী করবো? তার চেয়ে না দেওয়াই ভালো।
রফিকুল ইসলাম মন্টু: জলবায়ু পরিবর্তন, বন ইত্যাদির ক্ষেত্র তো এখন বড় বরাদ্দের জায়গা বলে আমরা জানি।
হাবিবুন নাহার: বাইরে থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের টাকা যদি আসতো, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারতো। আপনারা যা বাইরে থেকে শোনেন, আসলে তা না। এই ক’বছর তো ৩০০ কোটি করে আমরা পেয়েছি, এবার তো ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার তিনের এক অংশ জমা রাখতে হয়। দুই-তৃতীয়াংশ খরচ করতে পারি। আমরা যেটা চাচ্ছি, সেটাও আমরা করতে পারছি না।
রফিকুল ইসলাম মন্টু: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে আছে। সে ক্ষেত্রে আপনাদেরই তো কাজ বেশি। কেন হচ্ছে না?
উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার: কাজ আছে, কিন্তু কাজ করবো কী দিয়ে? টাকা না দিলে কাজ হবে?
পড়ুন মূল প্রতিবেদন: ** বাঁধের মালিকানা দিতে হবে জনগণকে