সাক্ষাৎকার

২৮ অক্টোবর নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই মন্তব্য করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যেই কর্মূসচির সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সাধারণ মানুষ চাচ্ছে না; সেই কর্মসূচি কখনো সফল হতে পারে না। সম্প্রতি রাইজিংবিডিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীগত স্বার্থের কারণে এই ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা নেই।

এ সময় তিনি বলেন, একাত্তরে তো অনেক বিরোধিতার মাঝে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যারা বিরোধিতা করেছে তারা তো টেনে ধরার চেষ্টা করবেই। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও উঠে এসেছে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী উন্নয়ন এবং জন ও পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ। উঠে এসেছে নদী-নালা, খাল-বিলের দখল রোধ ও দুষণ ঠেকানো, নৌ খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে সরকারের ভূমিকা ও পদক্ষেপসহ নানা বিষয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব থাকছে আজ।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ১৯৭০ সালে ৩১ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার, ধনতলা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পিতা মরহুম আব্দুর রৌফ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনৈতিক এবং সমাজ সেবক হিসেবে খ্যাতিমান। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ছাত্রলীগের মাধ্যমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ উপজেলা) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালে জাতীয় কাউন্সিলে দ্বিতীয়বারের মত সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার একই আসন হতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বার দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ উপজেলা) আসন হতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

রাইজিংবিডি: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিতে কিভাবে দেখছেন? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: আপনি যদি একজন সাধারণ মানুষের কাছে যান ২৮ অক্টোবর নিয়ে কিছু তারা কিছুই ভাবছে না। তারা তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে ভাবছে। আপনি যদি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান একটা সময় ছাত্র-ছাত্রীরা রাজনীতি নিয়ে যেভাবে ভাবতো, তারা এখন সেভাবে ভাবে না। তারা এখন ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে। সে মনে করে, আমার ক্যারিয়ার যদি আমি তৈরি করতে পারি সেটাই বাংলাদেশের জন্য কাজে লাগবে। কাজেই এই যে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি, এটা কিছু কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীগত স্বার্থের কারণে এই ধরনের কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা নেই। এগুলো নিয়ে যারা জড়িত আছেন তাদের ভাবনা আছে। যেই কর্মসূচির সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সাধারণ মানুষ চাচ্ছে না; সেই কর্মসূচি কখনো সফল হতে পারে না। বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। আর সেটা হলে সরকারের সেই ধরনের কাঠামো আছে।

রাইজিংবিডি: বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: তাদের  সহিংসতা তো নতুন না। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল করেছি তখন আমরা সহিংসতা দেখেছি। যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রায়ের বাস্তবায়ন করেছি, তখনও দেখেছি। ২০১৪ সালে সহিংসতা দেখেছি। ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া ৯৩ দিন একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে থেকে সমগ্র বাংলাদেশ জ্বালিয়ে দিয়েছেন। সেটাও আমরা দেখেছি। এসব সহিংসতা করে বাংলাদেশ লাভ হবে না। বাংলাদেশ এখন কোনো সামরিক জান্তার হাতে নেই। বাংলাদেশ এখন জনগণের হাতে আছে। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আছে। কাজেই এখন যদি কোনো কর্মসূচি দিতে হয় সেই সংবিধান অনুসরণ করে দিতে হবে, জনগণের স্বার্থকে সমুন্নত রেখে দিতে হবে। ওই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ দিয়ে বাংলাদেশকে আর ব্যাহত করা যাবে না।

রাইজিংবিডি: বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহির্বিশ্ব অতি উৎসাহ দেখাচ্ছে বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন? খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ বাংলাদেশ। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আপনি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যাবেন, বাংলাদেশের প্রশংসা পাবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একাত্তরে তো অনেক বিরোধিতার মাঝে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যারা বিরোধিতা করেছে তারা তো টেনে ধরার চেষ্টা করবেই। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি এটা অনেকেরই মাথা ব্যাথার কারণ। যেহেতু বাংলাদেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা আছে, অতীতে সামরিক শাসন দিয়ে বা অসাংবিধানিক শাসন দিয়ে বাংলাদেশকে টেনে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা এখন সম্ভব না। অসাংবিধানিক সরকার আর কোনোভাবেই বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। এই ধরনের চেষ্টা কেউ করছে বা বাংলাদেশের অনেকেই মনে করছে যে, বাংলাদেশকে এই ধরনের বিধি-নিষেধের মধ্যে ফেলে বাংলাদেশের অর্থনেতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া টেনে ধরবে মনে হয় না সেই সময় আর আছে।

রাইজিংবিডি: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী: রাইজিংবিডির পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।