বাংলা একাডেমি শিশুসাহিত্য পদক পেয়েছেন বরিশালের গুণী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক তপংকর চক্রবর্তী। গত ২৪ জানুয়ারি বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. হাসান কবীর স্বাক্ষরিত স্মারকে এ তথ্য জানানো হয়।
শিশুসাহিত্য ছাড়াও তপংকর চক্রবর্তী প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প লেখেন। বরিশালে বসবাসকারী কোনো কবি-সাহিত্যিক এই প্রথম বাংলা একাডেমি পদকে ভূষিত হওয়ায় সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন পরিসরের সবাই আনন্দিত।
এই বিশিষ্ট কবি-ছড়াকার শুধু সাহিত্য অঙ্গনে নয়, নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি সরকারি ব্রজমোহন কলেজ বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি, বরিশাল জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ বরিশাল শাখার আহ্বায়ক, বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম-সম্পাদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশাল শাখার সভাপতি ও বাংলা ভাষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
তপংকর চক্রবর্তী ১৯৭২ সালে সাংবাদিকতায় পেশাগত জীবন শুরু করেন। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সমকাল, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলাসহ বরিশালের আঞ্চলিক দৈনিক সংবাদপত্রে তিনি নিয়মিত লিখেছেন। বিভিন্ন সময়ে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিভিন্ন সময় তিনটি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ১৯৮৩ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। তিনি বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন।
তপংকর চক্রবর্তী সাহিত্য চর্চায় অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সম্মাননা ও পদক পেয়েছেন। ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বরিশাল অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে সম্মাননা, একই বছর বরিশাল জেলা প্রশাসক কর্তৃক জীবনানন্দ পুরস্কার, ২০১৮ সালে কলকাতার উতলা হাওয়া শ্রেষ্ঠকবি সম্মাননা ও ২০২০ সালে ঢাকায় বঙ্গনেত্রী সম্মাননা পান। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী রাইজিংবিডির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তার অভিব্যক্তির কথা তুলে ধরেন।
রাইজিংবিডি: বাংলা একাডেমি শিশুসাহিত্যে পদকে মনোনীত হয়েছেন, অনুভুতি কেমন? তপংকর চক্রবর্তী: যেকোনো পুরস্কার, পদক, সম্মাননা একজন লেখকের জন্য আনন্দের, সম্মানের। স্বীকৃতি কাজকে আরও ত্বরান্বিত করে। তবে বরিশালে বসবাসকারী আর কোনো কবি-সাহিত্যিক এ ধরনের পুরস্কার পাননি। তাই এই পুরস্কার আমার জন্য বিশেষ কিছু।
রাইজিংবিডি: শিশুদের ছাড়া আর কী ধরনের লেখা লেখেন? তপংকর চক্রবর্তী: শিশু ছাড়াও সমাজ জীবনের দুঃখ, কষ্ট আনন্দ নিয়ে আমার লেখনি। আমার ছড়ার মধ্যে বিজ্ঞান মনস্ক ও সমাজ পরিবর্তনের কথা থাকে। জীবন নিয়ে কথা বলাটাই সাহিত্যের মূল কাজ। আমি সেটা করে থাকি।
রাইজিংবিডি: লেখালেখি শুরু কবে থেকে? তপংকর চক্রবর্তী: লেখালেখি শুরু ১৯৬৬ সাল থেকে। ১৯৬৮ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে প্রথম লেখা ছাপা হয়।
রাইজিংবিডি: প্রথম বই বের হয় কবে? তপংকর চক্রবর্তী: প্রথম বই বের হয় ১৯৮৯ সালে। বইটির নাম ‘লাগ ভেলকি লাগ’। প্রথম প্রকাশে ৫ হাজার কপি বিক্রি হয়।
রাইজিংবিডি: সাহিত্য চর্চা নিয়ে পরিকল্পনা কী? তপংকর চক্রবর্তী: এখনকার ছেলেমেয়েরা সাহিত্য নিয়ে অতটা আগ্রহী নয়। তাদের আগ্রহী করার জন্য প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে সাহিত্য চর্চা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করার আগ্রহ আছে।
রাইজিংবিডি: এ পর্যন্ত কতটি বই প্রকাশিত হয়েছে? তপংকর চক্রবর্তী : ২২টি মৌলিক ও ৩০টি সম্পাদনা করা বই বের হয়েছে। এবারের বাংলা একাডেমি বই মেলায় আরও দুটি বই প্রকাশিত হবে।