নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ নামের যুবককে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা যাতে দেশ ত্যাগ না করতে পারে তার জন্য সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত মূল আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।
আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আমি ডিসি-এসপির সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ তখন আদালত বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তো মূল আসামি গ্রেফতার হয়নি। আপনি পুলিশ মহাপরিদর্শককে বলবেন কোন আসামি যেন পালিয়ে যেতে না পারে। সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করতে বলবেন।’
এর আগে সকালে রিফাত হত্যার ঘটনায় কী অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে তা দুপুর দুইটার মধ্যে জানাতে বলেন হাইকোর্ট। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আজ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
তখন আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রকাশ্যে রাস্তায় এভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো অথচ স্ত্রী ছাড়া তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে এলো না। সবাই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। এটা জনগণেরও ব্যর্থতা। বাংলাদেশের মানুষ তো এমন ছিল না।’
এসময় আদালত বলেন,‘রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার আত্মীয়-স্বজন ও দেশবাসীর সাথে আমরাও মর্মাহত।’ এরপর আদালত এ ঘটনায় কি অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দেন।
এদিকে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। মামলার পরপরই চন্দন নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে (২২) প্রকাশ্যে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পাশে থাকা অনেকে এ তাণ্ডব দেখলেও কেউ সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর চেষ্টা করেনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে আয়শা আক্তার মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামের এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। ওই যুবক নিজেকে তরুণীর সাবেক স্বামী এবং প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে থাকে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বচসা হয়। এর জের ধরে বুধবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দেশি অস্ত্রসহ সদলবলে অবস্থান নেয় নয়ন। রিফাত ও তার স্ত্রী মিন্নি সকালে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা রামদা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়। এ সময় মিন্নি তাদের বাধা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তার বাধা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা রিফাতের সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।
এ হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নিন্দার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে কোনো রকমে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান রিফাত। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না।দুই যুবক রামদা দিয়ে তার সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। মিন্নি এসময় নয়নকে ও নয়নের সহযোগীকে আটকানোর চেষ্টা করেন। তিনি 'বাঁচাও', 'বাঁচাও', 'না', 'না' বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু ততক্ষণে রামদার কোপে গুরুতর জখম হন রিফাত এবং পরে মারা যান।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে রিফাত বরগুনার পুলিশ লাইন এলাকার মেয়ে আয়শা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। এরপর থেকেই নয়ন মিন্নিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে ও ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন ও তার লোকজন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৯/মেহেদী/শাহনেওয়াজ