শামীমা নূর পাপিয়া। ব্যবসায়ী, সেই সাথে বাগিয়ে নিয়েছেন যুব মহিলা লীগের পদ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। অভিজাত এলাকায় জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে বেড়িয়েছেন দাপটের সঙ্গে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসা পাপিয়ার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই তার গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে গ্রাহকদের কাছে চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন পাপিয়া। ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতেন সেসব তরুণী। আর সেজন্য নামে-বেনামে একাধিক অভিজাত হোটেলে রুম ভাড়া নিতেন তিনি।
আলোচিত এ নারী নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিঃষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের আড়ালে ছিল তার অপরাধমূলক কাজকর্ম।
পাপিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। এক সময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
নরসিংদী শহরের ব্রাক্ষন্দী মহল্লার মতিউর রহমানের ছেলে মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের দ্বারা রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। শৈশব থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সুমন।
২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে প্রেমের সম্পর্ক করে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। সুমনকে বিয়ের পর পাপিয়া রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন।
লোকমান হত্যাকাণ্ডের বছর তিনেক পর পাপিয়া চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাদের।
এরপর থেকে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ২০১৮ সালে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হন পাপিয়া। নরসিংদী শহরের ভাগদী এলাকায় কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে তার। ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় পাপিয়ার বাবা সাইফুল বারীর বাড়ি।
নরসিংদীতে রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মী বাহিনী। প্রায়ই তারা আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে শোডাউন করেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবির অপব্যবহার করতেন পাপিয়া।
জানা গেছে, পাপিয়া গত এক মাসে রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচ তারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর।
প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাপিয়া, স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার, শেখ তায়্যিবাসহ আরো দুজনকে আটক করে র্যাব।
ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া পাপিয়ার কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে। ঢাকা/মাকসুদ/সনি