শামীমা নূর পাপিয়া। গত ৩ বছরে গড়ে তোলেন অপরাধ জগত। চাঁদাবাজি মাদক-অস্ত্রের ব্যবসা করলেও তার মূল ছিল অনলাইনে নারী ব্যবসা।
এই ব্যবসা দিয়ে কাউকে ব্ল্যাক মেইল, প্রভাবশালী কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহজেই ম্যানেজ করে ফেলতেন বলে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।
সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক সরোয়ার বিন কাশেম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পাপিয়া লোক দেখানোর জন্য ইন্দিরা রোডে ৫০ হাজার টাকায় এক বাসা ভাড়া নিলেও থাকতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। শুরুটা বিভিন্ন ফ্ল্যাটে মেয়ে সরবরাহ দিয়ে হলেও পরবর্তীতে তা চলে যায় ঢাকা শহরের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে। সঙ্গে চলে অনলাইনে মেয়ে সরবরাহ। বাংলাদেশে অনলাইন স্কট সার্ভিসের সাথেও পাপিয়ার সম্পর্ক আছে। স্কট সার্ভিসে মেয়েদের টাকা দেয়া হয় এবং প্রোফাইলের মাধ্যমে জানা যাবে মেয়েটি কোথায় আছে। তার বর্তমান অবস্থান ও তার প্রাথমিক দরদাম। এমনকি ছবি দেখানো হতো। পাপিয়া তা নিয়ন্ত্রণ করে অনলাইনের মাধ্যমে মেয়ে সরবরাহ করতেন। তারকা হোটেলে তিনি মেয়েদের দিয়ে আনন্দফূর্তি করাতেন। এর ফলে কে কে উপকৃত হয়েছেন তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রাইজিংবিডির প্রশ্নে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘পাপিয়ার অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত কিনা তা তদন্তের পরই বলা যাবে।’
তবে একটি সূত্র বলছে, পাপিয়ার খদ্দের সমাজের মূলত ব্যবসায়ী-শিল্পপতি বা কিংবা ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে এক শ্রেণির রাজনীতিক এবং সরকারি প্রভাবশালীদের সুন্দরী মেয়েদের বিনা টাকায় সরবরাহ করতেন। এর সঙ্গে ঢাকার তিনজন এবং নরসিংদী জেলার কয়েকজন রাজনীতিকের নাম বেরিয়ে এসেছে। যাদের অর্থের উৎসের সন্ধানে নেমেছে গোয়েন্দারা।
র্যাবের কাছে গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া স্বীকার করেছেন, পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই তার গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদের ধণাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী করতেন। এ জন্য একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। মেয়েদের চাকরির দেওয়ার প্রলোভনে গ্রাম থেকে তাদের নিয়ে আসতেন। জোর করে পরে এসব ব্যবসা করাতেন।
পাপিয়ার স্বামীর নাম মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। ২০০৯ সালে প্রেমের সম্পর্কে পর পাপিয়া সুমনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর পাপিয়া রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। লোকমান হত্যাকাণ্ডের বছর তিনেক পর পাপিয়া চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।
প্রসঙ্গ, শনিবার সকালে পাপিয়া ,তার স্বামীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এসময় তারা বিদেশে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ঢাকা/মাকসুদ/বুলাকী