রাজধানী উত্তরার ৬ তলা একটি বাড়ি। নম্বর ৩৮, সড়ক ১৭, সেক্টর ১১। এই বাড়িতে এক সময় ছিল একটি হাসপাতাল। নাম ছিল রিজেন্ট হাসপাতাল। গত বছর করোনার সময় সারাদেশের মানুষ এই হাসপাতাল সম্পর্কে জানতে পারে। এই হাসপাতালের মালিক ছিলেন মো. সাহেদ। তিনি রিজেন্ট সাহেদ নামেই পরিচিত ছিলেন।
সাবেক রিজেন্ট হাসপাতাল নামে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনটি বর্তমানে খালি আছে বলে জানিয়েছেন বাড়ির বর্তমান কেয়ারটেকার মো. ইয়ামিন। রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতের অনুমতি নিয়ে বেশ কয়েকমাস আগে তাদের সব মালামাল নিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। তারপর থেকে বাড়ির ভেতরের বেশ কিছু সংস্কার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে আবাসিক হিসেবে বাড়ির প্রতিটি ইউনিট ভাড়া দেওয়া হবে। এই বাড়ির মূল মালিক বিদেশে থাকেন। বাড়ির দেখাশোনা করেন মালিকের আত্মীয়। কেয়ারটেকার ইয়ামিন এ তথ্য জানান।
মো. সাহেদ রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান থাকার বদৌলতে তিনি রিজেন্ট সাহেদ নামেই পরিচিত ছিলেন। ২০২০ সালে করোনার আক্রমণে মানুষ যখন দিশেহারা, সরকার সেই দুর্যোগ সামলাতে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী রোগীদের বিনা খরচে করোনা পরীক্ষা এবং করোনার চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেটা মানেননি। টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি করোনার মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
সেই সময় সাহেদের সঙ্গে অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জনের সংশ্লিষ্টতার সংবাদ উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
রোগীদের বিনা খরচে করোনা পরীক্ষা করা, করোনার চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা না মানার অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ জুলাই র্যাব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় এবং হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর এই দুটি শাখা সিলগালা করে দেয়।
রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, পরীক্ষা ছাড়াই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০২০ সালের ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র্যাব। মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে প্রধান আসামি করে আরও ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তখন পালিয়ে বেড়ান সাহেদ। দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করেন তিনি।
মামলা হওয়ার এক সপ্তাহ পর ২০২০ সালের ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা দেবহাটা থানার, সাকড় বাজারের পাশের লবঙ্গপতি এলাকা থেকে পালিয়ে থাকা সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে করা মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। আর সাহেদ আছেন কারাগারে।