চার বছর আগে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে ঢাকার পান্থপথের ওলিও হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি। করোনার কারণে আদালত বন্ধ থাকায় কবে বিচার শেষ হবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
পান্থপথের ওই হোটেলে আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করেছিলো। তবে তাদের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৪ আগস্ট রাত থেকে ওলিও হোটেল ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। পরে সোয়াট নামে অভিযানে। এক পর্যায়ে সকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হন।
ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২৭ মাস মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন। প্রায় বছর খানেক হলেও মামলাটিতে এখনো কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য হয়নি। গত ৩১ মার্চ মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ১৯ মে ধার্য করেন। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন থাকায় আদালত বন্ধ ছিল। এ কারণে আর বিচারকাজ হয়নি। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।
মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান (জাকির) বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শেষ করতে আড়াই বছরের বেশি সময় লেগেছে। এরপর মামলাটি আমাদের আদালতে আসে। আমরা মামলাটির বিচারকাজ এগিয়ে নিচ্ছিলাম। এর মাঝে করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে যায়। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সময় আমরা মামলাটির চার্জগঠন করি। এরপর সাক্ষীদের আদালতে হাজির হতে সমন পাঠানো হলেও তারা আসেননি। এরই মাঝে আবার দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের কারণে আদালত বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে বিচার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো। বিচারে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবো।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।
হামলার পরিকল্পনা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই সময় কলাবাগান থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন কলাবাগান থানার এসআই সৈয়দ ইমরুল সায়েদ। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক, তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম। এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম কিশোর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়।
তাজুল বাদে অপর ১৩ আসামির মধ্যে তাজরীন খানম, সাদিয়া হোসনা লাকী, আবু তুরাব খান, তানভির ইয়াসিন করিম, হুমায়রা জাকির নাবিলা ও আব্দুল্লাহ হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। অপর ৭ আসামি কারাগারে রয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে আবু তুরাব খান ও সাদিয়া হোসনা লাকীর ছেলে আকরাম হোসেন ও মেয়ে তাজরীন খান।