জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। জঙ্গি এই সংগঠনটিকে ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে ২০০৫ সালের এই দিনে তারা একযোগে একমাত্র মুন্সীগঞ্জে ছাড়া দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা করে। জঙ্গিদের পেতে রাখা বোমার আঘাতে ২ জন নিহত হলেও বহু মানুষ আহত হন। সিরিজ বোমা হামলা মামলা ১৬ বছরেও শেষ হয়নি বিচার।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া মো. সোহেল রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, সিরিজ বোমা হামলার সবগুলো মামলা আমরা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছি। অনেকগুলো মামলার বিচার শেষ হয়েছে। আবার অনেকগুলোরই বিচার চলছে।
মামলাগুলোর তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিদের পুঁতে রাখা ওই বোমায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১০৪ জন আহত হন। ঘটনার পরপরই সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে সারা দেশে ওই সময় ১৫৯ টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ১৮টি, চট্টগ্রামে ৮টি, রাজশাহীতে ৪টি, খুলনা মেট্রোপলিটনে ৩টি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে ১২টি, এসএমপি ১০টি। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর রেঞ্জে পৃথকভাবে মামলা দায়ের করা হয়। সবগুলো মামলা পুলিশ বাদি হয়ে দায়ের করে।
মামলাগুলোর মধ্যে ১৪২টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বাকি ১৭টি মামলার ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় পুলিশ। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ১৩০ জন এবং গ্রেপ্তার করা হয় ৯৬১ জনকে। আর ১০৭২ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় আদালতে চার্জশিট।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সকাল ১১টার পর জঙ্গিরা নিজেদের তৈরি বোমা রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে একযোগে সারাদেশে বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গিরা বোমার সঙ্গে লিফলেট বিলি করে নিজেদের জানান দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসে। এরপরই এ হামলার নেপথ্যে, যোগানদাতা, অর্থদাতা এবং পরিকল্পনাকারী কারা তার সবকিছুই বের করে আনে তদন্ত সংস্থাগুলো। এ ঘটনার সঙ্গে তৎকালীন জেএমবির প্রধান ও ফাঁসি কার্যকর হওয়া শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইসহ শীর্ষ কয়েকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। যারা এদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিল।
জানা গেছে, সিরিজ বোমা হামলায় ঘটনায় ১৫৯ মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। মামলা থেকে ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, সিরিজ বোমা হামলার পর জঙ্গিদের শেখর উপড়ে ফেলা হয়। তবে তারা নিজেরা বাঁচতে নানান কৌশল অবলম্বন করে। তারই অংশ হিসেবে জেএমবি ভেঙে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে। এর মধ্যে নব্য জেএমবির সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে।