অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মিরপুরে ড্রামে ভরা একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়েও নাম পরিচয় নিশ্চিত হতে পারছিল না। এক পর্যায়ে নিহতের পরণে থাকা একটি গেঞ্জির মতো টি-শার্টে লেখার সূত্র ধরেই নাম-পরিচয়, খুনের কারণ এবং ৩ সন্দেহভাজন খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আসম মাহতাব উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দারুসসালাম থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত মো. মিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিরাজকে জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে তার দেয়া তথ্যে মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের এফ ব্লকের বাসা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করা হয়।’
‘এছাড়া পল্লবী এলাকা থেকে খুনের সঙ্গে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোরকেও গ্রেপ্তার করে তদন্ত কমকর্তা। পরে তাদের দুজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী মো. রাসেলকেও গ্রেপ্তার করা হয়।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘১৭ সেপ্টেম্বর নিহত ও গ্রেপ্তারকৃতরা একসঙ্গে প্রথমে গাবতলীতে বসে ইয়াবা সেবন করে। খুনের শিকার জুয়েলকে কাভার্ডভ্যানে উঠিয়ে ইয়াবা সেবন করানো হয়। এক পর্যায়ে মুখ চেপে গলায় রশি পেঁচিয়ে জুয়েলকে খুন করে। ওই দিন রাত ১২ টার দিকে মিরপুর লাভ রোডের পাশের রাস্তায় জুয়েলের ড্রামভর্তি মরদেহ ফেলে যায় গ্রেপ্তারকৃতরা। পরে পুলিশ গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠায়। নিহতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তার নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। তবে তার গায়ে থাকা একটি গেঞ্জিতে ‘সাফল্যের পথে একসাথে’ লেখা দেখে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে গেঞ্জিটি একটি টোব্যাকো কোম্পানির বলে জানা যায়। পরে গেঞ্জি ও নিহতের ছবি দেখালে জানা যায় নিহতের নাম মে. জুয়েল রানা। এরপরই খুনিদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।’
নিহত জুয়েল রানা একটি সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। এ কারণে তার কাছে সবসময় নগদ টাকা থাকতো। যা জানতো তার পূর্বপরিচিত ও খুনে জড়িত মো. মিরাজ। টাকার বিশেষ প্রয়োজন হয় মিরাজের। সে একটি দুধ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতো। মূলত জুয়েলের কাছে থাকা নগদ টাকা হাতিয়ে নিতে গ্রেপ্তারকৃত তিনজন তাকে খুন করে এবং সঙ্গে থাকা প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যদিও পরে দুজনের কাছ থেকে পৃথকভাবে ৩৬ ও ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
টাকার জন্যই কি তাহলে জুয়েলকে খুন করা হলো? এমন প্রশ্নে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্য এবং তদন্তে যতটুকু পাওয়া গেছে তার আলোকে টাকার জন্যই যে নির্মম ও জঘন্য এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তারকৃত রাসেল। যদিও টাকার প্রয়োজন ছিল মিরাজের।’