নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ মাদক সেবন করতে পারে না বলে দাবি করেছে পরিবার। তাদের ভাষ্য ফারদিন কখনও ধূমপান করেনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে মাদক নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরেই ফারদিনকে হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ফারদিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এখন বলা হচ্ছে মাদকের কথা। আমার ছেলে ধূমপানই করে না, সে মাদক কিনতে সেখানে কেন যাবে?’
বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীকে মাদক সংগ্রহ করতে এত দূর যেতে হবে কেন? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এই পিতা বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা এর আশপাশেই তো সব কিছুই পাওয়া যায়। ফারদিনকে ছোট থেকে আমরা বড় করেছি। সে শুধু পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো না, অবসর সময়ে বই নিয়ে বাসায় কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বিভিন্ন ডিবেটিং-এ অংশ নিতো। এমন ছেলে কীভাবে মাদকে আসক্ত হয়?’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না নারাজ নূর উদ্দিন রানা। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যে ছেলে কোনো দিন ধূমপানই করেনি সে কীভাবে মাদকে আসক্ত হবে? আমি এ কথা মানতে নারাজ। আমি চাই নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে প্রকৃত অর্থে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হোক।’
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ফারদিন রামপুরা থেকে যার সঙ্গে জুরাইন গিয়েছিলেন তাকে সনাক্ত করা গেছে। এ ছাড়া ফারদিন কেরানিগঞ্জ, ডেমরা, চনপাড়াসহ আরো বেশ কিছু এলাকায় ঘটনার আগে গিয়েছিলেন। সেসব এলাকায় কেন, কার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এসব বিষয় নিয়েও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। এ ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক, প্রেমঘটিত, রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে স্পেনের মাদ্রিদ যাওয়া নিয়ে কারো সঙ্গে বিরোধ ছিল কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার আগের রাতে ফারদিন ডেমরার চানপাড়া এলাকায় যান। সেখানে ফেনসিডিল কেনাবেচা নিয়ে মাদক কারবারিদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ৮-১০ জনের মাদক কারবারি তাকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়। এমন তথ্যে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। পরে র্যাবের অভিযানে বন্দুক যুদ্ধে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সিটি শাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এরপর তার পরিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারদিনকে সনাক্ত করে। তার শরীরে জখমের চিহ্ন ছিল। ঘটনার তিনদিন পর নিহতের বাবা রানা বাদি হয়ে রামপুরা থানায় নিহতের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইতোমধ্যে বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ( ডিবি)