নানা ইতিহাসের সাক্ষী পুরান ঢাকার আদালতপাড়া। বিদায়ী বছর ২০২২ সালেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। নভেম্বরের ২০ তারিখে দিনে দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটে, যা আগে কখনো ঘটেনি। এ ছাড়া বছরের শেষের দিকে এসে রাজনৈতিক মামলায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালতপাড়া। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত এবং গণঅধিকারের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও কারাবরণ ছিল আলোচনার শীর্ষে। এরমধ্যে অন্যতম ছিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের গ্রেপ্তার। এরমাঝে ঢাকার আলোচিত তরুণ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ও জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার। তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতপাড়া ছিল বেশ সরগরম। দেখা যায়, সরকারি দল ও বিরোধীদলের আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থান। এ ছাড়া বছরের অন্যতম ঘটনা ছিল সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া। তাছাড়া রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যাকাণ্ডের পর আসামিদের গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টিও ছিল আলোচিত।
জঙ্গি ছিনতাই: এবছর আদালতপাড়ার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল আদালতপ্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা। ২০ নভেম্বর অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। নিরাপত্তা নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন সদস্যকে প্রত্যাহারও করা হয়। এরপর আদালতপাড়ায় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। জঙ্গিদের বিশেষ নিরাপত্তায় আদালতে আনা নেওয়া হয়। এদিকে, এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
ফখরুল-আব্বাস-রিজভী গ্রেপ্তার: জঙ্গি ছিনতাইয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নয়াপল্টন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদের জুয়েলের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। রিজভী, অ্যানিসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। অপর ১৪ আসামিকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর ৮ ডিসেম্বর দিনগত রাত তিনটার দিকে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে পুলিশ। এরপর ৮ ডিসেম্বর দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি পুলিশ। বিকেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর কয়েক দফা তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার হিড়িক: ঢাকায় বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার হিড়িক পড়ে। বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, নিপুণ রায়, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল ইসলাম নিরব, তরুণ নেতা ইশরাক হোসেনসহ আরও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর আগে, গত ৬ এপ্রিল সকালে মতিঝিল এলাকায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল দক্ষিণের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে গিয়ে বিএনপির প্রয়াত নেতা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাশকে গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। ছয় দিন পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
জামায়াতের আমির গ্রেপ্তার: জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. মো. শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহ। তিন দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শফিকুর রহমানের সম্পৃক্ততায় পাওয়ায় ১২ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। প্রথম দফায় ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২১ ডিসেম্বর তার আবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
ছাত্র অধিকারের ২৪ নেতাকর্মীর জামিন: ৭ অক্টোবর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ছাত্র অধিকারের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় দফায় হামলা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ছাত্রলীগের সহায়তায় ২৪ নেতাকর্মীকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। মাস খানেকের অধিক কারাভোগের পর তারা জামিন পান।
হাজি সেলিম কারাগারে: দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের কারাগারে যাওয়ার ঘটনাটিও ছিল আলোচিত। ২২ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন হাজি সেলিম। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে অবশ্য উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান তিনি।
এদিকে, ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদারসহ ৩২ নেতার বিরুদ্ধে ২৯ মে ঢাকার আদালতে মামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মানসুরা আলম মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি শাহবাগ থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ: গত ১৭ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরদিন সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ কয়েকটা অচল হয়ে পড়ে নিউমার্কেট এলাকা। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়। সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান নাহিদ হাসান নামে এক কুরিয়ারকর্মী।
এ ঘটনায় নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এদিকে, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে। দুই মামলাতে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর বিএনপি নেতা, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
জুরাইনে পুলিশ বক্সে হামলা: গত ৭ জুন জুরাইন রেলগেট দিয়ে উল্টো পথে আসা একটি মোটরসাইকেলকে গতিরোধ করলে সার্জেন্ট আলী হোসেনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান মোটরসাইকেল আরোহী সোহাগ উল ইসলাম রনি ও তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে লোকজন জড়ো হওয়ায় ওই এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে এসে তাদের সবাইকে মীমাংসার জন্য সড়কে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। এসময় মোবাইলে ইয়াসিন জাহান নিশান বিষয়টি তার ভাই ইয়াসির আরাফাতকে জানান। তিনি লোকজন নিয়ে এসে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন। এরপর পুলিশ বক্স ভেঙে তারা বের হয়ে আসেন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে আইনজীবীসহ অপর আসামিদের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আর এঘটনায় আইনজীবীরা এক হয়ে তার পক্ষে দাঁড়ান। তারপরও আদালত আইনজীবীর রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরেও আনেন আইনজীবীরা।
হাজতখানা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পলায়ন: ঢাকার জেলা ও দায়রা আদালতের হাজতখানা থেকে ২৮ এপ্রিল কলেজ ছাত্র মুনসের আলী ওরফে মুন্না হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাদশা মিয়া পালিয়ে যান। পুলিশ হেফাজত থেকে হত্যা মামলার আসামি পালিয়ে যাওয়ায় আদালতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
টিপু-প্রীতি হত্যা: গত ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনী কাঁচা বাজার সংলগ্ন রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে শাজাহানপুর আমতলা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী প্রীতি। টিপুর গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ছিল সরগরম।
দুই বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যা: দুই বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যা মামলাও ছিল আলোচনায়। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল ফারদিন নূর পরশের মামলাটি। নিখোঁজের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে গত ৭ নভেম্বর রাতে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। পরে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে চিকিৎসকরা জানান। ফারদিন হত্যার ঘটনায় ৯ নভেম্বর রাতে তার বাবা নুর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা করেন। মামলায় নিহতের বান্ধবী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বুশরাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পর ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে বুশরা কারাগারে রয়েছে। তবে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, পরশ আত্মহত্যা করেছেন।
গত ১৪ জুলাই বিকেলে ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন মৈনট ঘাটে ১৫ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী তারিকুজ্জামান সানি। ওইদিন রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন মৈনট ঘাট থেকে থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৫ জুলাই বিকেলে সানির বড় ভাই হাসানুজ্জামান সানির সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ১৫ বন্ধুকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে ১০ জন হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। বাকি ৫ জন কারাগারে। এ দুই মামলা এখনও তদন্তাধীন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা: এবার মামলায় জড়িয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য। বসতঘর ভাঙচুর ও লুট করার অভিযোগে রাজধানীর পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলামসহ ১৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ২৩ জানুয়ারি ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে মামলা করেন পারভেজ আহম্মদ নামে এক ব্যক্তি। তবে আদালত মামলাটি না নিয়ে খারিজ করে দেন।
অন্যায়ভাবে আটকে রেখে মারধর, মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে কোতয়ালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর রুবেল মল্লিকসহ দুই জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে ১৮ জানুয়ারি মামলা করেন মুন্সিগঞ্জ জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এস এম সাকিব হোসেন। আদালত মামলাটি আমলে গ্রহণ করে আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। এদিকে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে ১০ নভেম্বর দারুস সালাম থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে একটি মামলা করেন গাজীপুর পুলিশ লাইনের কনস্টেবল আ. রাজ্জাক। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় একই থানার দুই সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) রফিকুল ইসলাম ও প্রসেঞ্জিত কুমারকেও আসামি করা হয়।
বনজ কুমারের মামলায় বাবুল আক্তার কারাগারে: পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা মামলায় পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে ১২ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ বছর বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। তিন বছর আগে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহতের ঘটনায় করা মামলায় ভবনের মালিকসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
২০২০ সালের ৩০ আগস্ট ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগে বাড্ডা থানায় মামলা করেন গুলশান থানা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া। গত ২৪ নভেম্বর ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান জোনের পরিদর্শক রিপন উদ্দিন। ২২ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশের দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলা গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান এলমা। তার শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন পাওয়া যায়। তবে এলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। গত ৩১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কাজী শরীফুল ইসলাম এলমাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ায় ইফতেখারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।
গত ৩ মার্চ রাজধানীতে গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে নিজ বাসায় এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ৫ মার্চ এশার মা ও এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহার প্লাবন ঘোষকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন। গত ৩০ অক্টোবর গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ওহিদুল ইসলাম এশার প্রেমিক প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে শিশু বিবেচনায় ঢাকার সিএমএম আদালতে দোষীপত্র দাখিল করেন।
তবে তদন্তাধীন রয়েছে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। এদের মধ্যে সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যা, গোপীবাগের সিক্সমার্ডার, উপস্থাপন ফারুকী হত্যা মামলা।
এ বছর বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার আসামিরা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এদের মধ্যে বরুন্নেসার শিক্ষিকা রুমা সরকার, হেলেনা জাহাঙ্গীর, রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন চৌধুরী।