একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার আব্দুল মান্নানসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
মৃত্যুদণ্ড আসামিরা হলেন-পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হেতালিয়া এলাকার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আ. মান্নান ডিলার ওরফে মান্নাফ, একই এলাকার আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার, চরখালী এলাকার মো. মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ এবং নুরুল আমিন হাওলাদার।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আর আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম।
আসামিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। চার অভিযোগে ২৪ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, আসামিদের গুলিতে তিন ব্যক্তি ও এক নারীকে গুরুতর জখম হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।
এই চার আসামি মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগের সমর্থক হলেও বর্তমানে তারা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক।তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার মোট ৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগগুলো হলো-১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানার তিন নম্বর ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ, নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারী মল্লিক ওরফে ধূলাইড্যা, চিত্ত রঞ্জন বেপারী, সতিশ চন্দ্র বেপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি এবং অনন্ত চাষীকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ পূর্বক গুলি করে হত্যা এবং আনুমানিক ৪০/৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট। একই সঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও আসামিরা সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
তৃতীয় অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্র কান্ত মিস্ত্রীকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশে গুলি করার সময় ২০০টাকার বিনিময়ে আসামিরা তাদের মুক্তি দেন।
চতুর্থ অভিযোগ-১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর জেলা সদরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সে সময়ে স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে থেকে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে ভান্ডারিয়া থানার মিয়ালকাঠী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা করা হয়। সে সময় সত্যরঞ্জন হালদারসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে। এর মধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। আসামিদের গুলিতে ৩ জন শরীরে এবং এক নারী স্তনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাদের মধ্যে দুই ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সে সময় আসামিরা শতাধিক বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।