নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবাসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। কারাগারে গ্রেপ্তার আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও স্বজনদের দেখা করে দেওয়ার কাজ করতেন ইসহাক।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ইসহাক গত বছর ঢাকার আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্য পালানোর বিষয়টি জানতেন। তবে পলাতক জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি ইসহাক। তবে কাশিমপুর কারাগারে গ্রেপ্তার আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও স্বজনদের দেখা করিয়ে দেওয়ার কাজ করতেন ইসহাক। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত পান তিনি। ইসহাকের নির্দেশে অবৈধভাবে সীমান্ত পথে পাশ্ববর্তী দেশে যায় চার জঙ্গি সদস্য। যাদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছিল। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে গ্রেপ্তার হন তারা। ডিজিএফআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতায় রোববার (১০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, আশিকুর রহমান ওরফে উসাইমান, মুহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে আবরার, মো. আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা ও মো. আবু জর ওরফে মারুফ। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ উগ্রবাদী বই এবং অন্যান্য সরঞ্জাম।
পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সাথে একত্রিত হয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর আমির ও শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ প্রায় শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব। যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র্যাব সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
ইসহাকের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন উগ্রবাদি পুস্তিকা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতো। এছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য প্রদান করে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সদস্যদের নিকট থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতো। বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। পাশ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখতেন এবং তারা সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রেরণ করতো।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলন
ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো ইসহাকের দাখিল পর্যন্ত পড়াশুনা করা গ্রেপ্তার আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা ২০১৫ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন। বিভিন্ন পেশার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি সংগঠনের রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এবং প্রশিক্ষণ শাখার প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আনসার আল ইসলামের বর্তমান আমির আবু ইমরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল ইসহাকের। আমিরের নির্দেশেই তিনি রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
অনলাইনে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন ইসহাক অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন। তার নির্দেশে সংগঠনের নতুন সদস্যদের গাজীপুর, টঙ্গি ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন আনসার হাউজে শারীরিক কসরতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাপস ব্যবহার করে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাসহ অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন ও শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিকট হতে নির্দেশনা নিতো এবং সংগঠনে তার অনুসারীদের সব ধরনের দিক-নির্দেশনা দিতেন।
কারাগারে জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো ইসহাকের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করিয়ে দিতেন। তিনি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় করায় সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক সাইবা হিসেবে পরিচিত পায়।
নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন হাফেজ আশিক কুরআনের হাফেজ গ্রেপ্তার আশিকুর রহমান ময়মনসিংহ এলাকায় হিজামার ব্যবসা করতেন। ২০১৮ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে।
পরবর্তীতে তিনি সংগঠনের ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম প্রধান সেকশন চিফ হিসেবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পাশাপাশি তিনি সংগঠনের জিহাদী প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়ে অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। নতুন সদস্যদের সংগঠন ও তথাকথিত জিহাদ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের জন্য উগ্রবাদী পুস্তিকা সরবরাহ করতেন। গ্রেপ্তার ইসহাকের নির্দেশনায় আশিক সংগঠনের মাসুলদের অধীনস্থ হিসেবে নতুন সদস্যদের বন্টন করার দায়িত্ব পালন করতেন।