আইন ও অপরাধ

শারক্কীয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করত রহিম 

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী আব্দুর রহিমকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক জব্দ করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। 

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, বুধবার (১৫ মে) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক জব্দ করেছে সিটিটিসি। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল ১টি, দেশীয় বন্দুক ৪টি, দেশীয় বারুদলোডেড গান ৩টি, দেশীয় ওয়ান শুটার গান ১টি, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ১টি, গুলি ১৬টি, কার্তুজ ১১টি, শটগানের খোসা ২৪টি, বাইনোকুলার ২টি, গ্যাস মাস্ক ১টি, চার্জার লাইট ১টি, রিচার্জেবল ব্যাটারি ১টি, ওয়াকিটকি ও চার্জার ২টি, এসিড সৃদশ্য তরল পদার্থ ৬ লিটার, ইলেক্ট্রিক তার ৬০ ফুট, মোবাইল সিগন্যাল বুস্টার ১টি, তারসহ এন্টেনা ১টি, হাতুড়ি ১টি, করাত ১টি, হেক্সো ব্লেড ১টি, বাল্ব ৪টি, ইলেকট্রিক হোল্ডার ৪টি, নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ২টি এবং ত্রিপল ১টি জব্দ করা হয়েছে। আব্দুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে রহিম ডাকাত গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। 

তিনি বলেন, জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করত রহিম। সে জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। গ্রেপ্তারের পর সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে সরবরাহ করার জন্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন বনে ড্রামের ভেতর অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে তা মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। পরে অভিযান চালিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ছাগল খাইয়্যা এলাকার পাহাড়ের ঢালে ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাটির নিচে রক্ষিত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলিসহ বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। আব্দুর রহিম আগে একাধিকবার অন্য জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল। পার্বত্য অঞ্চলে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার ট্রেনিং ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া যায়। এর পর যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আব্দুর রহিম একাধিকবার জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র সরবরাহ করে। পরে আরও বেশি অস্ত্র দেওয়ার কথা ছিল। সেজন্য কিছু অস্ত্র সে সংগ্রহ করেছিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন বনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জব্দ করা হয়। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শারক্কীয়ার সদস্যদের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এতে বিভিন্ন ধরনে রাসায়নিক দ্রব্য লাগত। সেই রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহের কথা ছিল রহিমের। সে জঙ্গি সংগঠনে সরবরাহের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার সংগ্রহ করেছিল। 

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামিন মাহফুজ যখন পাহাড়ে সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করে, তখন থেকে আব্দুর রহিম অস্ত্র সংগ্রহ করছিল। তার সঙ্গে আগে গ্রেপ্তার হওয়া অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদের যোগাযোগ ছিল। কবির সংগঠনের জন্য কাজ করতে রহিমকে প্রস্তাব দেয়। রহিম তার প্রস্তাবে রাজি হয় এবং অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য সংগ্রহেও সে কাজ করে। ২০২৩ সালের ২৩ জুন শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের পর শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ, অস্ত্রগুলোর উৎস, অর্থায়ন সম্পর্কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের আগে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. ইয়াছিন (৪০) এবং বান্দরবান থেকে অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদকে (৫০) ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, কুকি চিনের পাশাপাশি স্থানীয় কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম শারক্বীয়ার সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে। শামিন কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় নবমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার আড়ালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে সংগঠন গড়ে তুলে। নবমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিমকে সে সংগঠনের দাওয়াত দেয়। মো. কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম সংগঠনের হয়ে কাজ করতে রাজি হয় এবং অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। পাহাড়ে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সবার তালিকা পেয়েছি। তালিকার প্রায় সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। যারা প্রশিক্ষণের দাওয়াত পেয়েছে তাদেরও নাম পেয়েছি। 

এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে বা দেশের বাইয়ে শামিন মাহফুজের কোনো নেটওয়ার্ক রয়েছে কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা মনে করি, এখন সংগঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ নেই। এই সংগঠনের সকল শীর্ষ নেতাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। নতুন করে সংগঠিত হওয়ার মতো কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।