কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে নাশকতার অভিযোগে কাফরুল থানার মামলায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আটজনের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ সালাম ও বিএনপির সমর্থক মাহমুদুস সালেহীন।
এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী আসামিদের গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন রোববার ঠিক করেন।
এদিন তাদের আদালতে উপস্থিত করা হয়। প্রথমে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। অপরদিকে, আসামিদের পক্ষে মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মহসিন মিয়া, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
এরপর আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান।
প্রথমে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, আগে আমাদের পাঁচদিনের নেওয়া হয়। সেখানে অত্যাচার, নির্যাতন করা হয়। জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আমাদের কোনো চিকিৎসা হয়নি। যে অবস্থায় ছিলাম, সে অবস্থায় নিয়ে এসেছে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়াও হয়নি। আমাদের কাপড়-চোপড়ও আনতে পারিনি। অনুরোধ, আমাদের রিমান্ড না দিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আর আমাদের যেন সরাসরি রিমান্ডে না নেওয়া হয়। আমরা আগে জেলহাজতে যায়।
এরপর নুর বলেন, রিমান্ডে নিয়ে আমাকে টর্চার করা হয়েছে। টর্চারে আমার হাতে দাগ পড়ে গেছে। আমাকে যদি আবার রিমান্ডে নেওয়া হয় তাহলে জায়গাটা পচে যাবে, আমি মারা যাবো। এমনকি আমার অণ্ডকোষেও লাথি মারা হয়েছে। আপনি চাইলে মেডিক্যাল চেকআপ করে দেখতে পারেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমি বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। আমার বয়স ৬৬ বছর। রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্টের ডিরেকশন আছে। কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। ডিরেকশনটা ফলো করা হচ্ছে কি-না দেখবেন। না খাওয়ায়ে জেলখানা থেকে আমাদের নিয়ে এসেছে। বলেছে, অফিস আসেন। এরপর আদালতে নিয়ে এসেছে। প্রসিকিউশন একটা পক্ষ আর আমরা একটা পক্ষ। রিমান্ড চাইলেই দিতে হবে, বিষয়টা এমন না।
এদিন শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সাপোর্ট দেয়। আন্দোলনে সবার ছেলেই নেমেছে। কারণ ঢাবিতে তাদের ভাইদের ওপর হামলা করা হয়েছে। পাখির মত ছাত্রদের গুলি চালিয়ে মারলেন। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিতে সারাদেশে ১১ হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢুকালেন। মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে। রিমান্ড ছেলের হাতের মোয়া না, চাইলেই দিতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে আজকের এই আসামিদের বলির পাঠা বানানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে হাত, পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। তাদের ফিজিক্যাল অবস্থা দেখবেন। যে টর্চার করেছে, তাতে সমস্ত শরীর ক্ষত। নুরকে তো পঙ্গু করে দিয়েছে। আগে তাদের বাঁচান, বাঁচার পর যত পারেন টর্চার করেন।
নুরের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, নুরকে গত ২০ জুলাই রাত ৩টার দিকে বনানী থানার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রায় ৪০ ঘণ্টা গুম করে রাখা হয় এবং টর্চার করা হয়। পরিবারসহ আমরা সব এজেন্সিতে খবর নিয়েও তার সন্ধান পাইনি। মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর গত ২১ তারিখ তাকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। তার পাঁচদিনের রিমান্ড দেন আদালত। রিমান্ডের পর তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। রিমান্ড শেষে পুলিশের কাঁধে করে তাকে আদালতে আনা হয়। ফাঁসির আসামিকেও সুস্থ করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সে অসুস্থ, সুস্থ হোক তারপর রিমান্ড দেন।
এদিন আসামিদের চিকিৎসা, ডিভিশনের আবেদনও করা হয়। পরে আদালত আসামিদের বক্তব্য শোনেন। এরপর আদালত চিকিৎসা, ডিভিশনের আবেদন নথিভূক্ত করেন এবং আসামিদের খাওয়ার ব্যবস্থা ও ওষুধ সরবরাহের নির্দেশ দেন আদালত।