সালমান শাহ, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঝরে পড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় নক্ষত্রের একটি। তার ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর)।
তবে এই মৃত্যু নিয়ে এখনও ভিন্নমত রয়েছে। তার পরিবারের দাবি সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে ওঠে আসছে আত্মহত্যার বিষয়টি। তা মানতে নারাজ পরিবার। সালমানের মা সন্তানের পাশাপাশি সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবি করেছেন সরকারের কাছে।
পড়ুন: সালমান শাহবিহীন ২৮ বছর
১৯৯৬ সালের এই দিনে সালমানের মরদেহ রাজধানীর নিউস্কাটন রোর্ডে বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।
কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তা এখনো মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও ভক্তরা। সবশেষ পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন মামলাটি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পরিদর্শক সিরাজুল সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত পিবিআইয়ের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। এরপর আবার সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে রিভিশন দায়েরের আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন।
আগামী ২ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে রিভিশনের বিষয়ে শুনানি তারিখ ধার্য রয়েছে।
এ সম্পর্কে নীলা চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। আত্মহত্যার কোনো আলামত নেই। আমার একার নয়, ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া মামলার বিচার হোক। হত্যার পেছনে তার স্ত্রী সামিরা, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ফিল্মের অনেকে রয়েছে। সালমান শাহ'র জন্য ৪১ জন ভক্ত অনুরাগী মারা গেছে। আমি মা তো মরতে পারলাম না। একটা সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। তারপর দাবি দাওয়া নিয়ে সরকারে কাছে যাবো। আমি যদি মরে যাই সালমান শাহ'র ভক্ত অনুরাগীরা এ মামলার বিচার চালিয়ে নেবে।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন সালমান শাহ হত্যার বিচার হবে, আমি এটার বিচার করবো। কিন্তু তিনি করলেন কোথায়? আমি জানতাম শেখ হাসিনার আমলে বিচার হবে না। আমরা শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তন চেয়েছিলাম। নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে ওই সরকারের বিদায় দরকার ছিল। অবশেষে তাদের বিদায় হয়েছে। আমরা নতুন সরকারের কাছে শুধু সালমান শাহ হত্যার বিচার না, সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই।’
সাবেক পিবিআই প্রধান বনজ কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘বনজ কুমার অনেক টাকা খেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমাদের কাছে বারবার টাকা চাওয়া হয়েছে। সালমান শাহ'র অডিও রেকর্ডের ক্যাসেট পিবিআইতে দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ফেরত পাইনি। এ মামলার বিচার চাইতে গিয়ে আইনমন্ত্রী, পিপি আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আমাকে অনেক হেনস্তা করেছে। আব্দুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হয়েও তিনি সালমান শাহ হত্যা মামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।’
নিজের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরব। এখন দেশে গেলে আমার নিরাপত্তা নেই। ২০১৮ সালে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সালমান শাহ'র মা হওয়ায় আমাকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরে দেশ ছেড়ে এখানে (লন্ডনে) আশ্রয় নিয়েছি।’
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, আগামী ২ জানুয়ারি রিভিশন মামলার বিষয়ে শুনানি হবে। আমরা সঠিক তদন্তের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাব। যাতে প্রকৃত আসামিরা আইনের আওতায় আসে। এ হত্যার বিচার যেন সালমানের মা দেখে যেতে পারেন সেটায় প্রত্যাশা করি।