আইন ও অপরাধ

‘বৈষম্যহীন’ ফল চেয়ে বিক্ষোভ: গ্রেপ্তার ২৬, ছাড়া পেলেন ২৮ জন

এইচএসসিতে ‘বৈষম্যহীন’ ফলের দাবিতে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা হয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা এই মামলায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আর ২৮ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে অবৈধ প্রবেশ করে বিক্ষোভের ঘটনায় ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।

তালেবুর রহমান বলেন, বুধবার সচিবালয়ে অবৈধ প্রবেশ করে বিক্ষোভের ঘটনায় আটক ৫৪ জনের মধ্যে শাহবাগ থানার মামলায় ২৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি ২৮ জনকে তাদের অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আরও অজ্ঞাত ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

দুই মাস আগে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে স্থগিত এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল শিক্ষা বিভাগ। ফল প্রকাশের পর এসএসসির সব বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে নতুনভাবে ‘বৈষম্যহীন’ এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দাবিতে গতকাল সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী।

বুধবার সচিবালয়ের ভেতরে এই বিক্ষোভ ঘিরে ব্যাপক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেককে মারধর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরাও শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। এতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় পুলিশ ৫৪ জনকে আটক করে।

চলতি বছরের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি ছিল।

একপর্যায়ে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তখন স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ।

স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হয় ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)।

অর্থাৎ এসএসসিতে যে নম্বর পেয়েছিলেন শিক্ষার্থী, সেটি এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এ দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফল তৈরি করা হয়েছে।

১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন শুধু এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

ফল প্রকাশের পর একদল শিক্ষার্থী বলে আসছেন, ইতোমধ্যে যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এজন্য এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সব বিষয়ের ওপর ‘ম্যাপিং’ করে ফল নতুন করে প্রকাশ করতে হবে। এই দাবিতে রোববার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে বিক্ষোভ করেন এসব শিক্ষার্থীর একটি অংশ।

শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে সেদিন চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। সেই অনুযায়ী সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমাও দেন তিনি।

একই ধরনের দাবিতে আরও কয়েকটি শিক্ষা বোর্ডেও বিক্ষোভ, তালা দেওয়া, ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, সেদিন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে কর্মসূচি চলাকালে তাদের ওপর হামলা হয়। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

অন্যদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলে আসছেন, শিক্ষার্থীরা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে, এমনকি কক্ষের সামনেও ভাঙচুর চালান। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দাবি আদায়ে বুধবার সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।