আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু যেখানে যেতেন ‘স্বর্ণের নৌকা’ ছাড়া উপহার নিতেন না বলে আদালতকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানিতে একথা বলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিপ এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে ওমর ফারুক বলেন, ‘আমির হোসেন আমু ১৪ দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক। তিনি কখনো চিন্তা করেননি হেলমেট পড়ে, হাতে হাতকড়া লাগিয়ে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ক্ষমতায় থাকার আমরণ ট্যাবলেট খেয়েছিলেন বলে মনে করতেন। কিন্তু বিধাতা তা মানেননি। তিনি সবকিছু ঠিক করে দেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবকে বুঝিয়ে বাকশাল কায়েম করে। দল থেকে সিরাজুল ইসলাম, আ স ম রবদের বের করতে আমু-তোফায়েলের ভূমিকা ছিলো। তাদের কারণে স্বাধীনতার পর দেশে জনগণের মধ্যে বিভাজন বিরাজ করে। তারা শেখ মুজিবকে স্বৈরাচার করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। এক দলীয় বাকশাল কায়েমের মুল হোতা আমু-তোফায়েল। বাংলার বাণী পত্রিকা ছাড়া আর কোনো পত্রিকা বের হতো না। জাসদ রাজনীতি করতে না পেরে অভ্যন্তরে চলে যায়। সিরাজ শিকদার বাম রাজনীতি করতো। তাকে হত্যা করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়। এরপর কি ঘটে সবাই জানেন। তবুও ষড়যন্ত্র থেমে নেই।’
তিনি বলেন, ‘এরপর ১৯৯১, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে ক্ষমতার একটা পালাবদল চলে আসছিলো। এরপর কি এমন হলে ১৫ বছর ভোটবিহীন থাকতে হবে। বাপকে যেভাবে বিপথে নিয়েছে, মেয়েটাকেও সেভাবে নিয়েছে আমু-তোফায়েলরা। হাসিনাকে বুঝাতো, ততদিন বেঁচে থাকবেন ক্ষমতায় থাকবেন। ফ্যাসিস্ট তৈরিতে তাদের ভূমিকা রয়েছে। এরফলে হাজার হাজার লোক খুন, গুম হয়েছে। অনেকে দেশে থাকতে না পেরে মালয়েশিয়াসহ ইউরোপে চলে গেছে। দেশের স্বাধীনতা অন্যের কাছে বিকিয়ে দিয়েছে। দেশের রাজনীতি নষ্ট করার কৌশলীদের একজন আমু।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় তারা গণভবনে মিটিং করে। যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় যেভাবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপরও এভাবে গুলি চালায়। ৫ আগস্টের পর তার এলাকা ঝালকাঠিতে নিপীড়িত জনতা তার অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরেছে। নিপীড়িত মানুষ তার বাড়িতে আগুন দেয়। সেখানে ৫ কোটি টাকা পাওয়া যায়। টাকার জাজিম বানিয়ে ঘুমাতেন। যেখানে যেতেন স্বর্ণের নৌকা ছাড়া উপহার নিতেন না। দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। তার সহযোগীরাও পালিয়ে আছেন। হয়তো আস্তে আস্তে বের হয়ে আসবেন। এদের শাস্তি হোক। তাহলে আর ফ্যাসিস্টের জন্ম হবে না।’
এরপর আমির হোসেন আমুর পক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
পরে আদালত তার ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এরআগে বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।