ঢাকায় মালয়েশিয়ার তিন নাগরিকের গোপন সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করা এবং জনশক্তি রপ্তানির নামে প্রতারণার লক্ষ্যে বিশেষ একটি মহলের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন।
ওই তিন ব্যক্তি হলেন: মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন ফর ফরেন ন্যাশনালের সভাপতি দাতো শ্রী থাইয়াগরাজ ও সাধারণ সম্পাদক ড. সুকমারানা এনকে নায়ার এবং দাতো মো. নোয়া। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কৌশল হিসেবে কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীসহ ওই তিন ব্যক্তি রাজধানীর পল্টন থানায় গত ৩ সেপ্টেম্বর দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নিজেদের মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন ওই তিন ব্যক্তি। তারা মানবাধিকারকর্মী, মালয়েশিয়ান কেডিএনের লোক, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক, সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্যাদি পরিচয় দেন। প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কুয়ালালামপুর এনসিবি (ইন্টারপোল) বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করান। চিঠিতে দুজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মালয়েশিয়ান সরকারের ইমিগ্রেশন সফটওয়্যার ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশনা চান।
তবে, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, ওই তিন ব্যক্তির দুজন মালয়েশিয়ায় জনশক্তি আমদানি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা। তারা যেসব পরিচয় দিয়েছেন, তা ভুয়া এবং প্রতারণার শামিল।
২০০১ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ড. সুকুমারানাকে সেখানকার ব্যবাসায়ী সংগঠন পিএএসএমএ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা বাংলাদেশি জনশক্তি নেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও প্রতারণা করে আসছেন। তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাত নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এফডব্লিউসিএমএস মালয়েশিয়ান সরকারের জনশক্তি আমদানিবিষয়ক ইমিগ্রেশন সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১৪টি সোর্স কান্ট্রি থেকে জনশক্তি নিয়ে থাকে। এই সফটওয়্যার বন্ধ রাখার নির্দেশনা বাংলাদেশ চাইতে পারে না। তাছাড়া, পল্টন থানার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্টারপোলের মাধ্যমে যে নির্দেশনা চেয়েছেন, সেটাও যৌক্তিক নয়। তিনি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য চাইতে পারতেন। সেটা না করে তারা রুহুল আমিন স্বপন নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও আমিন নূর নামে মালয়েশিয়ার এক নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আমিন নূর এ মামলার আসামিও নন। পল্টন থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এবং অপর একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ীর লিখে দেওয়া ড্রাফট অনুযায়ী পল্টন থানা পুলিশ কুয়ালালামপুর ইন্টারপোলকে একটি চিঠিও দিয়েছে। তা কোনোভাবেই যৌক্তিক হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, ‘আমি চিঠি দেওয়ার বিষয়ে শুনেছি। প্রথমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। পরে অবগত হয়েছি। কোনো ভুল থাকলে সেটা সংশোধনের চেষ্টা করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল ইসলাম বলেছেন, মানবপাচারের যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা মালয়েশিয়ায় হয়েছে। তাই, ইন্টারপোলের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে তথ্য চেয়েছি আমরা।
অভিযোগ আছে, ওই তিনজন নিজেদের ‘মালয়েশিয়ান সরকারের প্রতিনিধি’ বলে পরিচয় দেন। বাংলাদেশ দূতাবাস ও মালয়েশিয়ান দূতাবাসের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ওই ব্যক্তিরা মালয়েশিয়ান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে আসেননি। মূলত, তারা জনশক্তি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।