হত্যা ও অপহরণ-সংশ্লিষ্ট তিন ঘটনা দেশব্যাপী বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বগুড়ার গৃহবধূ হত্যাকাণ্ড, আজিপুর থেকে অপহৃত শিশু উদ্ধার আর রাজধানীর পল্লবীতে দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা।
বগুড়ায় গৃহবধূকে হত্যায় প্রথমে ছেলেকে দায়ী করা করা হলেও পুলিশি তদন্তে এ ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে। পুলিশ বলছে, নিহতের ছেলে নয়, বাড়ির ভাড়াটিয়াই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এর আগে র্যাব জানিয়েছিল, ১০ নভেম্বর হাতখরচের টাকার জন্য মাকে হত্যা করে ছেলে সাদ। পরে মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন।
ঢাকার আজিমপুরের ১৫ নভেম্বর এক বাসায় দিনেদুপুরে ডাকাতি হয়। এ সময় মালামালের সঙ্গে আট মাসের একটি শিশুকেও অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরপরই ওই শিশুর ছবিসহ একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশুটি উদ্ধার করে র্যাব।
দিনের অন্য ঘটনাটি রাজধানীর পল্লবীর এলাকার। সেখানে সাত ও চার বছরের দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করে বাবা ‘আত্মহত্যাচেষ্টা’ করেছেন বলে খবর মিলেছে। পুলিশের সন্দেহ, পারিবারিক কলহ ও আর্থিক অনটনের কারণে শিশু দুটিকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
এই তিন ঘটনা সম্পর্কে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে-
বগুড়া: বগুড়ার গৃহবধূ উম্মে সালমাকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনা ‘পাল্টে’ গেছে। পুলিশ জানায়, ওই গৃহবধূকে ছেলে, হত্যা করেছে ভাড়াটিয়া। হত্যার সাথে জড়িত এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে ১৪ নভেম্বর রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নিহত উম্মে সালমার বাসার চারতলার ভাড়াটিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া বেগম (৫০), তার সহযোগী গুনাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন (২৬) ও একই এলাকার নিখিল রবিদাসের ছেলে ভ্যান চালক সুমন রবি দাস (২৮)।
ওই গৃহবধূকে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান পুলিশী রিমান্ডে হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার এবং মোবাইলের সূত্র ধরে তারা প্রথমে আটক করেন বাসার ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে। মাবিয়া পুলিশকে জানান, চার মাস আগে উম্মে সালমার ওই বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি এখানে মাদক ও অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
বিষয়টি টের পাওয়ার পর উম্মে সালমা ও তার স্বামী আজিজুর রহমান ভাড়াটিয়া মাবিয়া আক্তারকে এক মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলছিলেন। তার কাছে দুই মাসের ভাড়াও পাওনা ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে মাবিয়া বাড়ির গৃহকর্ত্রী উম্মে সালমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি তার সহযোগী ও মাদক ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র সরকার এবং মুসলিমকে নিয়ে গেল শনিবার উম্মে সালমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ওসি আরও জানান, পরিকল্পনামতো ঘটনার সময় মাবিয়া প্রথমে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। পরে মোবাইল ফোনে ডেকে নেন দুই সহযোগী সুমন ও মুসলিমকে। তারা দুজন বাসায় ঢুকেই চেতনানাশক স্প্রে করে উম্মে সালমাকে অচেতন করেন। এরপর তার নাক মুখ ও হাত বেঁধে বাসার ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে তারা তিনজন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আটকের পর মাবিয়া সুমন ও মুসলিম উম্মে সালমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়েছে। পরে তাদের দেখানো জায়গা থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্রগুলো উদ্ধার করে। বিকেলে তাদের তিন জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেওয়ার জন্য বগুড়ার আদালতে নিয়েছে পুলিশ।’’
গত ১১ নভেম্বর গৃহবধূ উম্মে সালমা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। পরদিন ১২ নভেম্বর দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান।
মেজর এহতেশামুল হক খান বলেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় নিহতের স্বামী আজিজুর রহমান, ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানসহ আরেও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব অফিসে ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। হত্যার কারণ হিসেবে র্যাবের এই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত বিষয় এবং হাত খরচের টাকার জন্য সাদ তার মাকে হত্যা করেছে বলে জানতে পেরেছি।’’
বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘‘কিছু তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিছু তথ্য আমাদের দিয়েছে। সেগুলো যাচাই করছি। তাদের কোর্টে পাঠানো হয়েছে। তারা যেসব কথা বলবে, যেসব তথ্য আমরা যাচাই করব। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।’’
ঘটনার সাথে নিহতের ছেলে জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনো প্রমাণ এখনও আমাদের কাছে নেই। সে র্যাবের কাছে স্বীকার করলেও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। এরপরে তাকে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিই। সে এখনও রিমান্ডেই আছে।’’
গ্রেপ্তার সাদকে রিমান্ড শেষে শনিবার সন্ধ্যায় জেল-হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেন। আজ রিমান্ড শেষে দুপচাঁচিয়া আলমি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান সাদকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সাদের পক্ষে আজ কেউ জামিন আবেদন করেননি বলে জানিয়েছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘‘আদালতে পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় হয় তো তার জামিন আবেদন করা সম্ভব হয়নি।’’
এদিকে, সাদকে নিয়ে র্যাবের এমন বক্তব্যে মর্মাহত হয়েছিলেন তার বাবা আজিজুর রহমান। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে আজিজুর রহমান বলেন, ‘‘গত ১১ নভেম্বর স্ত্রী উম্মে সালমার জানাজার পর আমাকে ও ছেলে সাদ আজিজুর রহমানকে র্যাব তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর সাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন আমি পাশের কক্ষেই ছিলাম। সাদকে অনেক টর্চার করা হয়।’’
‘‘র্যাব যখন সংবাদ সম্মেলন করে জানাল, সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আমরা খুব অবাক হয়েছি। ধারণা করেছিলাম, হয়তো টর্চারের কারণেই সে মাকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছিল। তবে, প্রাথমিকভাবে পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে সাদের সম্পৃক্ততা পায়নি। কিন্তু, র্যাবের সেই ঘটনায় আমার ছেলের ও আমার ব্যাপক সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। ছেলের মানসিক অবস্থা এখন কী, একমাত্র সেই বলতে পারবে।
‘‘রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল একটা বাহিনী (র্যাব) এমন কাজ করবে কখনো আশা করিনি। এ ঘটনায় আমরা কোনো লিগ্যাল অ্যাকশনে যাব কি না, এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’’
আজিমপুর: রাজধানীর আজিমপুরে একটি বাসায় ডাকাতির সময় তুলে নেওয়া শিশুকে মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এই ঘটনায় ফাতেমা আক্তার শাপলা নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ভুক্তভোগী শিশু আরিশা জান্নাত জাইফার বাবা আবু জাফরকে নজরদারিতে রেখেছে র্যাব।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশুটিকে উদ্বারের পর শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এই তথ্য তুলে ধরে র্যাব। দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘‘ডাকাতির পর আট মাসের কন্যা শিশুকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে বাসাটি রেকি করেছিলেন অপহরণকারী চক্রের প্রধান মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলা।’’
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতি ও শিশুটিকে অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে প্রধান পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তার শাপলাকে (২৭) মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে বাসাটি ফামেতা রেকি বলে তথ্য দিয়ে মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘‘এরপর ওই বাসায় সাবলেট নেন তিনি এবং বাসায় ওঠার এক দিন পরেই ডাকাতির পর শিশুটিকে অপহরণ করেন।’’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘অপহরণের পর গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ায় চক্রটি আর মুক্তিপণ দাবি করেনি।’’
গত ১৫ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ফারজানা আক্তার নামের নারীর বাসা থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে তার কন্যা শিশুটিকে তুলে নিয়ে যান ফাতেমা ও তার সহযোগীরা।
মুনীম ফেরদৌস বলেন, “ভুক্তভোগী পরিবার শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১০ এর কাছে সহায়তা চায়। জড়িতদের গ্রেপ্তারে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণের পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করে।”
“সেখান থেকে আট মাস বয়সি কন্যা শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।”
“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ফাতেমা ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন,” বলেন মুনীম ফেরদৌস।
জাইফার মায়ের নাম ফারজানা আক্তার। তিনি সরকারি চাকরি করেন এবং শিশুটির বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় গত তিন বছর ধরে বসবাস করে আসছেন তারা।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি জানিয়েছেন অপহরণের এক সপ্তাহ আগে শিশুটির মায়ের সঙ্গে অফিসে যাতায়াতের সময় ফাতেমার পরিচয় হয়। ফাতেম তখন নিজেকে রাইসা বলে পরিচয় দেন এবং তার বাড়ি নওগাঁয় বলে মিথ্যা তথ্য দেন।
প্রাথমিক ‘স্বীকারোক্তির’ বরাত দিয়ে র্যাব জানিয়েছে, ফারজানকে ফাতেমা বলেন তিনি অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন।
“ফাতেমা শিশুটির মা ফারজানাকে আরও জানান তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিলে সারা দিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভালও করতে পারবেন। এই আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ফাতেমাকে সাবলেট দিতে রাজি হন শিশুটির মা ফারজানা।”
ঘটনার পরম্পরার বর্ণনায় মুনীম ফেরদৌস বলেন, “ফাতেমা ১৪ নভেম্বর বিকেলে ফারজানার বাসায় আসেন এবং তাকে দুই হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া দিয়ে রাতযাপন করেন।”
“পরের দিন সকালে ফাতেমা ফারজানাকে জানান, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। সে অনুযায়ী সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ফাতেমা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে তিন ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসেন। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ফাতেমা ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শিশুটির মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন।”
তারা ফারজানার বাসার স্বর্ণালংকার-নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে জাইফাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে ফামেতার বাসায় চলে আসেন এবং তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন, বলেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে শিশু জাইফাকে উদ্ধার করে ফাতেমা গ্রেপ্তার করা হয়।
“গ্রেপ্তার ফাতেমা ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ফাতেমা আসলে একজন গৃহিনী। তিনি ২০১০ সালে তার পরিবারের সঙ্গে মোহাম্মদপুরে বসবাস শুরু করেন। ঢাকার একটি কলেজে মার্কেটিংয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা আর শেষ করেনি তিনি।
পল্লবী: রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সাত ও চার বছরের দুই শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। শিশু দুটির বাবা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সন্দেহ, পারিবারিক কলহ ও আর্থিক অনটনের কারণে শিশু দুটিকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
শিশু দুটির নাম বিজয় (৭) ও মুসা (৪)। তাদের মরদেহ রাখা হয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। আর গুরুতর আহত বাবা মো. আহাদকে (৩৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা পল্লবীর বাইগারটেক এলাকায় থাকেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পারিবারিক কলহ, আর্থিক অনটনসহ নানাবিধ কারণে ছুরি দিয়ে দুই শিশুর গলা কেটে হত্যা করেছেন তাদের বাবা আহাদ। একই ছুরি দিয়ে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। স্থানীয় লোকজন শিশু দুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’’
ডিসি মাকছেদুর রহমান আরও বলেন, ‘‘এ ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’’
আহাদের বাড়িওয়ালা নাসির সরকার বলেন, ‘‘তিন মাস আগে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তার বাসার নিচতলা ভাড়া নেন আহাদ। তিনি একটি বাসার তত্ত্বাবধায়কের কাজ করেন। তার স্ত্রী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।’’
নাসির সরকার আরও বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাসার নিচতলায় তিনি চিৎকার শুনতে পান। পরে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দুটি শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন। স্ত্রীর সঙ্গে আহাদের প্রায়ই ঝগড়া হতো।’’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘আহাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।’’
(প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকা ও বগুড়া প্রতিনিধি)।