বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানের রিমান্ড শুনানিতে তার পক্ষের আইনজীবীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের ভাষ্য- আন্দোলনের পর কিছুটা ভয় পেলেও পুলিশ আবার আগের মতো ‘অপকর্ম’ করছে।
আরিফ হাসানের আইনজীবী বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, “পুলিশ আগে যে অপকর্ম করছে; আন্দোলনের পর কিছুটা ভয় পাইছে, থানায় যেতে পারেনি; এখন আবার অপকর্ম করছে।”
রোববার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভির এমডি আরিফ হাসানের রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।
রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় সজিব নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আরিফ হাসান।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, “আরিফ হাসানের নির্দেশে প্রত্যক্ষ মদদে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি অর্থ সহায়তা করেছেন। আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতাও তিনি। পুলিশ যৌক্তিক রিমান্ড আবেদন করেছে। রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।”
আরিফ হাসানের পক্ষে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানিতে বলেন, “আরিফ হাসান আওয়ামী লীগের কেউ না। বলা হচ্ছে উনি আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা। ১৭ বছর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার টাকা কামিয়েছে। তাদের আবার অর্থের যোগানদাতা লাগে?”
“ঢাকায় যে বিল্ডিং (গুলিস্তানের তোপখানা রোডে পার্টি অফিস) করছে; সেটি কত টাকা দিয়ে করছে। আরিফ হাসান আওয়ামী লীগের কেউ না। তিনি কেন টাকা দিতে যাবেন? আর ঘটনার আড়াই মাস পর এই মামলা হয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে সন্দেহের বশে আটক করা হয়েছে।”
জয়নুল আবেদীন বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সুফল চাই। পুলিশ কি আগের জায়গায় থাকবে? আগে গ্রেপ্তার করে বলত বিএনপির অর্থদাতা; এখন বলছে আওয়ামী লীগের অর্থদাতা। ২০ বছর পরও কি একই অবস্থা থাকবে? “একটা ঘটনা ঘটেছে। যারা হত্যা করেছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে; তাদের বিচার হবে। আর ঘটনার সময় তিনি (আরিফ হাসান) সিঙ্গাপুরে ছিলেন। সেখানে থেকে কীভাবে ডিরেকশন দেবেন?” রিমান্ড ফরওয়ার্ডিংয়ে বলেন তিনি।
এই আইনজীবী বলেন,“পুলিশ আগে যা করছে- আন্দোলনের পর কিছুটা ভয় পাইছে; থানায় যেতে পারেনি, এখন আবার অপকর্ম করছে। আরিফ হাসান আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের সুবিধাভোগী নন। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।”
আরেক আইনজীবী তুহিন হাওলাদার বলেন, “আমরাও এ ঘটনার বিচার চাই। তবে যারা ঘটিয়েছে, ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত তাদের বিচার হোক। রাষ্ট্রপক্ষ এত কিচ্ছা কাহিনি বলে গেল; তবে তাকে (আরিফ হাসান) রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিক কারণ তো থাকতে হবে! ঘটনার সময় তিনি সিঙ্গাপুরে ছিলেন। কাল ধরে এনে মামলা করিয়েছে। ওমরা হজ পালন করতে যাচ্ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে ধরে এনে এ কাজ করেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। ঘটনায় তার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা থেকে থাকলে বলার কিছু নাই।”
তিনি বলেন, “আমরা জিজ্ঞাসাবাদের বিপক্ষে না। এসব ঘটনায় সম্পৃক্ত মামলায় অন্যান্য আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছে। কিন্তু তার বেলায় করেছে তিন দিন। কী কারণে করেছে? নিশ্চয়ই গুরুত্ব কম আছে বিধায় তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত। রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থণা করছি।”
শুনানি শেষে আদালত আরিফ হাসানকে দুই দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
এর আগে শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে বিদেশ যাওয়ার সময় সন্দেহ হওয়ায় ইমিগ্রেশন পুলিশ আরিফ হাসানকে আটকে দেয়। পরে খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।