রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অনেক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং ৪০ জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
পুরান ঢাকায় অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুপক্ষে অনেকে আহত হন।
আহতদের মধ্যে ৩৩ জন দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঢামেকে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন— হাসিনুর রহমান, রাজিব, অনুপম দাস শাহেদুল, নোমান, শাহিদুল হুমায়ুন, ইসলাম, ফারুক, রানা, আরাফাত, সুমন, মারুফ, রুমান, মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, মিনহাজ হোসেন নাফি, গুলিবিদ্ধ আব্দুর রহমান তুহিন, মোহাম্মদ রোহান।
চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের মধ্যে ১৭ জন টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। অন্যরা বিনা টিকিটে গণ হারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘‘সংঘর্ষে আহত হয়ে এ পর্যন্ত ৩৩ জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসেছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’’
এদিকে, সংঘর্ষে আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ৪০ জন। তারা সবাই কবি নজরুল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
তাদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তারা হলেন— নাইম, সিয়াম, মোল্লা সোহাগ, রাজিম, শরীফুল, জাহিদ, মোস্তফা, রাতুল, শফিকুল, মেহেদী, সজিব বেপারী, ফয়সাল, সাগর, ইমন, সিয়াম।
সন্ধ্যায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে দায়িত্বরত (জরুরি বিভাগে) ডা. মো. রাশেদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘জরুরিভাবে আনুমানিক এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। সকলের নাম জানতে পারিনি, তবে আহত সবাই নজরুল এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। গুরুতর যারা অসুস্থ প্রায় ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে জরুরি বিভাগে ভর্তি আহতদের পর্যবেক্ষণে রেখে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।’’
নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘আজকে মোল্লা কলেজের হামলায় আমরা নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীকে কলেজের মেইন গেট থেকে বের হতে দেয়নি। কিন্তু ডেমরা বা অন্যান্য স্থানীয় আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজের সঙ্গে গেছে এবং নজরুল কলেজে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানতে পারি।’’
সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়কে বারবার ফোন এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজে গিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গত বুধবার ‘ভুল চিকিৎসায়’ ডিএমআরসির এইচএসসি শিক্ষার্থী অভিজিত হাওলাদারের মৃত্যুর অভিযোগে কলেজটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রদলের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরত ডিএমআরসি কলেজের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে।
এর প্রতিবাদে রবিবার ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার ডিএমআরসি কলেজ, নটরডেম কলেজ, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি কলেজ, খিলগাঁও সরকারি কলেজসহ ৩০টির বেশি কলেজের শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে প্রায় ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সোমবার সকাল থেকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে পরে সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ডিএমআরসি অভিমুখে যেতে থাকে। নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে সংঘর্ষে জড়ায় মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। হামলায় দুই গ্রুপের অনেকেই আহত হয়েছেন।