আইন ও অপরাধ

মোল্লা কলেজে হামলা: দিনভর যা জানা গেল

পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসার অবহেলায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার (২৪ নভেম্বর) ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

যাত্রাবাড়ীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

রণক্ষেত্র ডেমরা এলাকা   সোমবার সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন।

এ সময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে হামলা চালান। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।

এ সময় কলেজটির ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন তারা। পরে দুই পক্ষ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। এতে ছাত্র ও সাধারণ মানুষসহ শতাধিক আহত হন। দুপুরে এই হামলা-সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যান হামলাকারীরা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ সদস্যরা। এরইমধ্যে কবি নজরুলসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পড়ে আছেন আহত একজন

লুটপাট

হামলার পর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের গেট ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার, কম্পিউটার-ল্যাপটপ-ডকুমেন্টসহ মূল্যবান অসংখ্য জিনিস লুটপাট করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বেশকিছু যুবক কলেজে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে তারা কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় অধিকাংশ মাস্ক পরিহিত ছিলেন।

কলেজের ভেতর থেকে চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, রাউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে বের হতে দেখা যায় তাদের। মাস্ক পরা এক যুবককে দেখা যায়, চাকাওয়ালা চেয়ারের ওপর কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউসহ বিভিন্ন জিনিস টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

অন্য একটি ভিডিওতে আরেক যুবককে দেখা যায়, তিনি মাথায় বড় একটি টেলিভিশন এবং এক হাতে একটি মাল্টিপ্লাগ নিয়ে যাচ্ছেন। তার পাশে আরেক যুবকের হাতে ছিল একটি সিপিইউ।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে

 

হতাহত

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আহত ৪০ শিক্ষার্থী।

চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. মাহমুদ বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০ জন এসেছেন আমাদের কাছে। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। গুরুতর ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেন, ‘‘অনেক আহত শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী গুরুতর আহত তাদের আমরা ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’

পড়ে আছেন আহত একজন

৭০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) প্রায় ৭০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন।

তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের হামলায় আমাদের ১২তলা ভবনের কোনো কাঁচ আর অক্ষত নেই। ৫টি লিফট, কম্পিউটার ও সায়েন্স ল্যাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীরা নগদ টাকা, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, সার্টিফিকেট, ৩ শতাধিক ফ্যান, প্রায় ৩০টির মতো ল্যাপটপ, অসংখ্য কম্পিউটারসহ মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস লুট করেছে। এতে করে প্রায় ৭০ কোটির মতো ক্ষতি হয়েছে।’’

পড়ে থাকা একজনকে মারধর করা হচ্ছে

মোল্লা কলেজে আটকা পড়ে হামলা চালানো শিক্ষার্থীরা

হামলা চালানোর পর কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু শিক্ষার্থী ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে আটকা পড়েন। 

তাদের উদ্ধারে বিকেল সোয়া ৩টায় যৌথবাহিনী মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে কলেজটির শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন।

পরে পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্মিলিতভাবে কলেজ ভবনে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, এপিবিএন ও পুলিশের কয়েকশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। 

মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলার ঘটনা ঘটেছে

হামলা ঠেকাতে ‘ব্যর্থ’ পুলিশ

পুলিশ হামলা ঠেকাতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি কলেজের ছাত্ররা মিলে লাঠিসোঁটা নিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে আসছিল। যাত্রাবাড়ী মোড়ে আমাদের সীমিত ফোর্স সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছি তাদের আটকানোর জন্য। পরবর্তীতে সেটা ব্যর্থ হই। তারা আমাদের বাধা ডিঙিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়। তারা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার। তাদের মধ্যে ছাত্রের বেশে অন্যান্য মানুষও ছিল।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এসব বিষয়ে অনেক আইনগত প্রক্রিয়া আছে। আমরা সবাই নতুন এসেছি। আপনাদের সাথে কাজ করতে এসেছি। আপনারা আমাদের সাদরে গ্রহণ করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আমরা আপনাদের জীবন-সম্পদ নিশ্চিত করার জন্যই সম্মিলিতভাবে যৌথবাহিনীর সাথে কাজ করছি। যৌথবাহিনীর কাজকে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আজ থেকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ আপনাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা সম্মিলিতভাবে এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা উন্নত করব।’’

এই হামলার সঙ্গে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে খবর পাওয়া তথ্যে মনে হচ্ছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ছাত্রদের বেশে এখানে এসেছে। তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে, হামলা করেছে। কলেজটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেটি খুবই দুঃখজনক।’’

তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনায় পুলিশ, র‍্যাব, আর্মি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। আমরা অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত সেসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হব।’’

যাত্রাবাড়ীতে সড়কে দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা

৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন   সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা   এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। রোববার (২৪ নভেম্বর) কলেজটির অধ্যক্ষের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে কলেজটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনিবার্য কারণবশত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর কলেজের সব শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে এই নোটিশ উপেক্ষা করেই সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে কলেজ গেটে অবস্থান নিয়ে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুলসহ সাত কলেজের হাজারও শিক্ষার্থী ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে তাণ্ডব চালিয়েছেন। এতে কলেজটির ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।

৩ কলেজের সঙ্গে বসবে ডিএমপি   ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় এই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অনেকেই মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ

এক দিনে এত ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে সরকার   সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এসব সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন থাকলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’’

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘ঋণের নামে জড়ো হওয়া থেকে শুরু করে এক দিনে এত ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত করতে এসব ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের দুর্বলতা ছিল। কিন্তু এটাও মানতে হবে যে পুলিশ একটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। পুলিশ আগের মতো ভূমিকা নিলে আরো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারত।’’

উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘‘পুলিশ একটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আছে, সেই জায়গায় যখন এত এত শিক্ষার্থী নেমে এসেছে, পুলিশ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারত। পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সংঘর্ষে জড়ায়নি। পরে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। পুলিশকে আরো সক্রিয় করতেই রদবদল করছি। কারো ব্যর্থতা থাকলে তাদেরও আমরা পরিবর্তন করব।’’

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন কলেজে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। ঢাকা কলেজে এ রকম ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমরা বারবার আহ্বান জানাচ্ছি কোনপ্রকার উসকানিতে পা না দিতে। ছাত্ররা যেন ধৈর্য সহকারে যেকোনো সমস্যা কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বা সরকারের মধ্যে অংশীভূত হতে পারে। এর মাধ্যমে সমাধান করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, ছয় দিন আগ থেকে এর সূত্রপাত। একজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ থেকেই এ ঘটনা ঘটে। সেটা ছিল ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর হামলায় কারা কারা জড়িত সেটা ব্যবস্থার নেওয়া বিষয়ে আইনগত বিষয় চলমান। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই টলারেট করা হবে না।’’

আসিফ বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেছে সব সংঘর্ষ এড়াতে। তবে আমরা দেখেছি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাত জন ও মাহবুবুর রহমান কলেজের তিন জনের নিহতের খবর রটেছিল। এখন পর্যন্ত নিহত হওয়ার কোনো খবর আমরা পাইনি। কোনো গণমাধ্যমেও এ খবর পাইনি। তবে অনেকে আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটালো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুর চালানো হয়েছে

৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও গুলিভর্তি ম্যাগজিন চুরির অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ।

রোববার (২৪ নভেম্বর) পুলিশের উপ-পরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলাটি করেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সূত্রাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখারুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রোববার (২৪ নভেম্বর) ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৭-৮ হাজার শিক্ষার্থী মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রসহ দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে। সরকারি অস্ত্রের (পিস্তল) গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরি, সরকারি ডিউটিতে ব্যবহৃত এপিসি গাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। তারা দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ ও জীবননাশের হুমকি দেয়া এবং ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে।

এ ছাড়া পুলিশের আর্মড পুলিশ কার (এপিসি) ও ডিউটিরত পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে মোট ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।